২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেব্রুয়ারিতেই ইউক্রেনে হামলার আশঙ্কা রাশিয়ার অস্বীকার

নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
-

ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা রাশিয়ার নেই, তবে নিজের ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে রাশিয়া কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ শুক্রবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন ইস্যুতে তার দেশের অবস্থান তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ আরো বলেন, ‘মস্কো আশা করে- যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পাশ্চাত্য মিত্ররা রাশিয়ার প্রকৃত অবস্থান উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।’
শুক্রবার হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগের দিন বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় জেলেনস্কিকে বাইডেন সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ‘সুনিশ্চিত’ বা ‘অতিস্পষ্ট সম্ভাবনা’ আছে। বাইডেনের ফোনালাপের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার অবস্থান তুলে ধরলেন ল্যাভরভ।
গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। মাসের শেষ দিকে অবশ্য সেনাদের ফিরিয়ে নেয়া শুরু হয়, কিন্তু এখনো সেখানে ১০ হাজারের বেশি সেনা রয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরো বেড়েছে এই উত্তেজনা। ১৯৪৯ সালে গঠিত হওয়া নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্সকে (ন্যাটো) রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদের বিরোধী। এক সময়ের সোভিয়েত অঙ্গরাষ্ট্র ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রুশ বংশোদ্ভূত। দেশটিতে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীও বেশ সক্রিয়। এই গোষ্ঠীর সশস্ত্র সহায়তায় ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। রাশিয়ার ভৌগোলিক নিরাপত্তাবিষয়ক উদ্বেগের আর একটি কারণ কৃষ্ণসাগর। এটি রাশিয়ার একমাত্র সামুদ্রিক নৌপথ। এই সাগরের উপকূলবর্তী অপর দেশ ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ন্যাটোর তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে, যা কখনই রাশিয়ার কাম্য নয়।
এ দিকে রাশিয়ার আচরণকে ‘আশঙ্কাজাগানিয়া’ উল্লেখ করে ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী সোমবার (৩১ জানুয়ারি) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। জাতিসঙ্ঘে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে ও দেশটিকে লক্ষ্য করে নানা অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও জাতিসঙ্ঘ সনদের জন্য সুস্পষ্ট হুমকি।
তিনি বলেন, আমরা উত্তেজনা কমাতে নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদকেও ইউক্রেন, রাশিয়া ও ইউরোপের জন্য কী কী ঝুঁকি রয়েছে এবং রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক নীতি কেমন হবে তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘হুমকিমূলক আচরণ’ এবং ইউক্রেন সীমান্ত ও বেলারুশে রুশ সেনাদের উপস্থিতিতে আশঙ্কা বাড়ছে উল্লেখ করে মার্কিন প্রতিনিধি বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। তিনি বলেন, এখন বসে বসে অপেক্ষা করার সময় নয়। এখনই পরিষদের পূর্ণ মনোযোগ দরকার। আমরা সোমবার সরাসরি ও উদ্দেশ্যমূলক আলোচনা হবে আশা করছি।
মূলত শুক্রবারই জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক ডাকতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এদিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর টেলিফোনে আলাপ হওয়ার কথা থাকায় এটিকে বাধাগ্রস্ত না করতেই পরিষদের বৈঠক পিছিয়ে সোমবার ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি হওয়ায় উত্থাপিত যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দেয়ার অধিকার রয়েছে রাশিয়ার। এরপরও লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড মনে করছেন, সবার সামনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড তুলে ধরা ও ইউক্রেনের প্রতি আগ্রাসী আচরণের জন্য ক্রেমলিনকে একঘরে করতে এটি একটি বড় সুযোগ। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না রাশিয়া অন্য দেশ আক্রমণ করলে নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য তা মেনে নেবে ও চুপচাপ বসে থাকবে। রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতা থাকলেও আমরা যদি নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপন করি ও তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জোট দেখাতে পারি, তবে তারা (রাশিয়া) বিচ্ছিন্ন অনুভব করবে।


আরো সংবাদ



premium cement