১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ‘রেড লাইন’ মানবে না যুক্তরাষ্ট্র

সীমান্ত রেখার একটি বাঙ্কার থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে রাশিয়াপন্থী যোদ্ধাদের অবস্থান দেখছেন ইউক্রেনের এক সেনা : ইন্টারনেট -

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার রেড লাইন মানবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মস্কো তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে যে আক্রমণের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, তা ‘অত্যন্ত দুরূহ’ করে তুলবেন বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, ২০২২ সালের শুরুতে ইউক্রেনে আক্রমণ করতে পারে রাশিয়া।
এরই অংশ হিসেবে ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি ৯৪ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা জড়ো করেছে মস্কো। সেখানে প্রতিনিয়তই মহড়া চালানো খবর পাওয়া যাচ্ছে; যা নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছে ইউক্রেন। উত্তেজনা প্রশমনে করণীয় নিয়ে চলতি সপ্তাহে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বাইডেন ও পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপের আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে এ-ও সতর্ক করেন যে, রাশিয়ার দেয়া কোনো রেড লাইন মেনে নেবেন না।
গতকাল শনিবার মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে ক্যাম্প ডেভিড সামরিক ঘাঁটিতে সাংবাদিকদের বাইডেন আরো বলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানো থেকে বিরত রাখার জন্য আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। তা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ব্যাপক ও অর্থপূর্ণভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট মেটানো সম্ভব।’ তবে রাশিয়ার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন কেমন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সাজিয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। গত মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটকে সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ‘রেড লাইন’ যদি ন্যাটো অতিক্রম করে তা হলে তারা বাধ্য হবে পদক্ষেপ নিতে। মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা টেবিলে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। বহু দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়। যার ফলে বেশির ভাগ দেশ সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ নিয়ে রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা সামরিক মিত্রদের বাদানুবাদ দিনকে দিন বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে। আর সেই বাদানুবাদের বিস্ফোরণ দেখা গেছে বৃহস্পতিবার সুইডেনে ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠকে।
স্টকহোমের বৈঠকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পাশে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন রাশিয়া তার ঘরের পাশে ন্যাটো সামরিক জোটের নতুন কোনো তৎপরতা কোনোভাবেই সহ্য করবে না। ল্যাভরভ সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোট রুশ এই বার্তা অগ্রাহ্য করলে ইউরোপে আবারো যুদ্ধ শুরু হতে পারে। তার মন্তব্য ছিল ইউরোপকে আবারো ‘যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন’ দেখতে হতে পারে। সুইডেনের বৈঠকে রাশিয়া ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে যার মূল কথা ন্যাটো জোটকে ইউরোপের পূর্বে নতুন কোনো বিস্তৃতির চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
ব্লিঙ্কেন রাশিয়ার সেই সেই প্রস্তাব বা দাবির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি; বরং তিনি পাল্টা সতর্ক করেছেন ইউক্রেনে যেকোনো সামরিক অভিযান চালালে রাশিয়াকে তার ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল এবং ইউক্রেনের জাতিগত রুশ অধ্যুষিত ডনবাস অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে সাত বছর ধরে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা ন্যাটো জোটের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন এই টানাপড়েন দিনকে দিন বিপজ্জনক চেহারা নিচ্ছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট
এ দিকে গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রতিবেশী ইউক্রেনে এক লাখ ৭৫ হাজার সেনা নিয়ে বহুমুখী আক্রমণের পরিকল্পনা সাজিয়েছে মস্কো। এতে বলা হয়েছে, আগামী বছরের গোড়ার দিকেই আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা পুতিন সরকারের। এখন পর্যন্ত ইউক্রেন সীমান্তে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে ৯০ হাজারের বেশি রুশ সেনা।
মার্কিন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গোয়েন্দা নথির বরাতে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, পরিকল্পিত অভিযানটি একটি বহুমুখী আক্রমণ হতে পারে। নথিতে দেখা গেছে, রাশিয়া সীমান্ত এলাকার চারটি স্থানে বাহিনী মোতায়েন করছে। যদিও মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
পুতিন-বাইডেন বৈঠক আগামী সপ্তাহে
আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মস্কো টাইমস। ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উসাকভের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী সপ্তাহে এক ভিডিও বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে পুতিন ও বাইডেনের মধ্যে।


আরো সংবাদ



premium cement