২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসরাইলি আদালতের প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাখ্যান

শেখ জাররাহ থেকে উচ্ছেদে আপিল; চূড়ান্ত আদেশের তারিখ নির্ধারিত হয়নি
-

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে ইসরাইলি নিম্ন আদালতের রায়ের আপিলে সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন আপিল করা ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা। ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী সংস্থাকে ভাড়ার বিনিময়ে তারা ‘সুরক্ষিত বাসিন্দা’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারেন বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট। আলজাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, মিডল ইস্ট আই ও মিডল ইস্ট মনিটর।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আপিল শুনানিতে বিচারকরা প্রস্তাব দেন, ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী সংস্থাকে ভাড়ার বিনিময়ে তারা ‘সুরক্ষিত বাসিন্দা’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারেন। এর আগে শেখ জাররাহ থেকে উচ্ছেদে ইসরাইলি নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মহল্লার বাসিন্দা চার ফিলিস্তিনি পরিবার আল-কুর্দ, জাওনি, আবু হাসনা ও আসকাফি আপিল করেন। গত ১০ মে আপিলের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও ওই সময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তা স্থগিত করা হয়।
সোমবারের শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো আদেশ দেননি। আপিল শুনানি স্থগিত করে আদালত জানান, তারা এই বিষয়ে পরে চূড়ান্ত আদেশ দেবেন। তবে এর জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করেননি তারা। সুপ্রিম কোর্ট যদি ফিলিস্তিনিদের আপিল প্রত্যাখ্যান করেন, তবে চার পরিবারের প্রায় ৭০ ফিলিস্তিনি বাসিন্দা নিজেদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের শিকার হবেন। আইজ্যাক আমিত, নোয়াম শোলবার্গ ও ড্যাফনি বারাক-ইরেজের তিন বিচারকের আপিল প্যানেলের প্রস্তাবে বলা হয়, শেখ জাররাহ মহল্লার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের ‘সুরক্ষিত বাসিন্দার’ স্বীকৃতি দেবে ইসরাইল। তাদেরকে ওই মহল্লা থেকে কখনোই উচ্ছেদ করা হবে না। তবে এর জন্য তাদেরকে ‘ভাড়াবাবদ সামান্য অর্থ’ ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারী সংস্থা নাহালাত শিমনকে দিতে হবে।
আলজাজিরার প্রতিনিধি হুদা আবদুল হামিদ পশ্চিম জেরুসালেমে ইসরাইলের আদালত চত্বর থেকে জানান, আদালত আপিল করা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে এই বিষয়ে একটি দলিলে স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দেন। দলিলে শেখ জাররাহ মহল্লায় নিজেদের বাড়িতে ইসরাইলি মালিকানার অধীনে ভাড়ার বিনিময়ে তিন প্রজন্ম পর্যন্ত তাতে থাকার শর্ত নির্ধারিত ছিল বলে জানান হুদা আবদুল হামিদ। আপিলকারীরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। শেখ জাররাহর বাসিন্দা মোনা আল-কুর্দ মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘তারা আমাদের একটি আপসমূলক চুক্তিতে যেতে চাপ দিচ্ছে, যা বসতি স্থাপনকারীদের সন্তুষ্ট করবে; কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি।’
ফিলিস্তিনিদের অভিযোগে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী নন বলে জানান মোনার ভাই মোহাম্মদ আল-কুর্দ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, এই কাঠামোতে নিরপেক্ষ বা ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে। পুরো দেশটিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফিলিস্তিনিদের ভূমি আত্মসাৎ ও বাড়ি দখল করে।’ শেখ জাররাহের অপর বাসিন্দা আলা সালাইমা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, আপিলকারী পরিবারগুলো সম্পূর্ণভাবে এই আপসে যেতে অস্বীকার করেছে। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্ত থেকে আমাদের বাড়ির জন্য ভাড়া দেবো, ওই মুহূর্ত থেকেই আমাদের মালিকানা থাকবে না। এটি কোনো সমাধান নয়। এই বাড়িগুলোর মালিক আমরাই।’
আপিল করা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর আইনজীবী সামি ইরশিদ আলজাজিরাকে বলেন, ইসরাইলি আদালতের এই প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এমন কোনো প্রস্তাব শুনিনি, যা যথেষ্ট নিরপেক্ষ এবং বাসিন্দাদের অধিকার রক্ষা করছে। সুতরাং আমরা কোনো আপসে যাচ্ছি না।’ তবে তিনি এই শুনানিকে ‘শুভ অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বিচারকরা জানিয়েছেন তারা আমাদের দ্বিতীয় এক শুনানিতে ডাকবেন। তারা আমাদের আপিল এখনো প্রত্যাখ্যান করেননি; এটি উত্তম ইঙ্গিত।’ সর্বশেষে শেখ জাররাহর বাসিন্দাদের অনুকূলে রায় দেবেন।’ এর আগে গত এপ্রিলে জেরুসালেমের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট (ইসরাইল পরিচালিত) শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের আদেশ দেন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো রায়ের বিপক্ষে ইসরাইলি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে পশ্চিম তীর, গাজাসহ ইসরাইলের অভ্যন্তরের ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement