আল-আকসায় ইসরাইলি হামলায় মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ

পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি দখলদারদের হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম বিশ্ব। পবিত্র মসজিদের ভিতর নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ প্রায় সব মুসলিম দেশ। তবে এই ইস্যুতে অনেকটাই নমনীয় সুর পশ্চিমাদের। মসজিদে ইসরাইলি তাণ্ডব নিয়ে বেশি কিছু না বললেও তারা সরব হয়েছে ইসরাইলের দিকে হামাসের রকেট ছোড়া নিয়ে। এ বিষয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ।
জেরুসালেমের শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে সহিংসতা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। সোমবার ভোরে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর পর সন্ধ্যায় গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। এতে প্রাণ হারিয়েছে শিশুসহ অন্তত ২৫ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলিদের এই বর্বর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন।
আল-আকসায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। মঙ্গলবার ভোরে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলিদের এই কর্মকাণ্ড গোটা মুসলিম বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষানীতি লঙ্ঘন করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে সৌদি আরব। এই ঘটনার জন্য ইসরাইলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সমঝোতা লঙ্ঘন করে যেকোনো ধরনের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা, শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মনে করে, ইসরাইলি বাহিনীর এসব ঘটনা মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির চরম লঙ্ঘন। এটি বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানুষের অনুভূতিতেও আঘাত করেছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো, দখলকৃত এলাকায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি জোর করে জব্দ করা এবং যুদ্ধাপরাধ হতে পারেÑ এমন কর্মকাণ্ড থেকে ইসরাইলকে বিরত রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
গাজায় ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। হামলার পর তিনি ফিলিস্তিনি নেতাদের কাছে ফোন করে ইসরাইলের ‘সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব’ প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার কাছে করা ফোনকলে তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য তুরস্কের সহযোগিতা আরো বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘মানুষের ভূমি ও বাড়ি চুরি’ এবং একটি ‘বর্ণবাদী সরকার ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার অভিযোগ করেছেন। ইসরাইল অবৈধভাবে দখল করে রাখা এলাকার বাসিন্দাদের টিকা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং আল-আকসা মসজিদের ভেতর ‘নিরীহ মুসল্লিদের’ ওপর গুলি চালিয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। সোমবার ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জাতিসঙ্ঘে ফোন করে আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি তাণ্ডবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এটি ‘যুদ্ধাপরাধ’-এর শামিল বলে মন্তব্য করেছেন।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ‘আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি বাহিনীর নতুন আক্রমণ’-এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মিসরের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজিহ আল-নাজারি সোমবার কায়রোতে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত আমিরা ওরনের সাথে দেখা করে বলেছেন, তারা ইসরাইলের এই পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান ও এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে উৎখাত বরদাশত করা হবে না। এক টুইটে ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, ইন্দোনেশিয়া ইসরাইলের এ ধরনের পদক্ষেপের নিন্দা এবং বারবার আইন লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে আহ্বান জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে।
কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদ না জানিয়ে উল্টো সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইসরাইলে এক ঝাঁক রকেট হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি অগ্রহণযোগ্য উসকানি।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্রিটেনও সহিংসতার জন্য ফিলিস্তিনিদেরই দায়ী করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, জেরুসালেমসহ ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ জায়গাগুলোতে হামাসের রকেট হামলার নিন্দা করছে ব্রিটেন।
তবে বিমান হামলায় গাজায় হতাহতের ঘটনার পর সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, ফ্রান্স দ্রুততম সময়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানো এবং যেকোনো ধরনের উসকানি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।