২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মিয়ানমারে বিক্ষোভে আবারো পুলিশের গুলি

আরো কূটনীতিকের পদত্যাগ; যুক্তরাষ্ট্র থেকে শত কোটি ডলার তুলে নেয়ার চেষ্টা; বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের
-

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরতদের ওপর দমন-পীড়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও নিন্দার মধ্যেই আবারও বিক্ষোভস্থলে গুলি চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। গতকাল শুক্রবার মান্দালয় শহরে আবারো নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে একজন। এ দিকে ক্ষমতা দখলের পরপরই মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত শত কোটি ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ তা আটকে দেয় বলে জানা গেছে।
শুক্রবার দেশটির বিভিন্ন শহরে মিছিল করেন বিক্ষোভকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জাপ্রণ এ দিন বিক্ষোভকারীরা সেøাগান দিচ্ছিলেন, ‘প্রস্তর যুগের অবসান হয়েছে, তোমাদের হুমকিতে আমরা ভীত নই।’ পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সে সময় একজন গলায় গুলিবিদ্ধ হন। এরই মধ্যে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এক চিকিৎসক টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার ধারণা তার বয়স ২৫ এর মতো। তার পরিবারের সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।’ শুক্রবার ইয়াঙ্গুন শহরে সাদা অ্যাপ্রন পরে প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক বিক্ষোভে যোগ দেন। ওই বিক্ষোভে রাবার বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটির কূটনীতিকদের বিদ্রোহ আরো প্রশস্ত হচ্ছে। সেনা সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়ার পর দেশটির জাতিসঙ্ঘ দূতকে বহিষ্কার করে নতুন একজনকে দায়িত্ব দেয়া হলে তিনিও পদত্যাগ করেছেন। ফলে আগের জনই ওই দায়িত্বে বহাল থাকছেন। সেনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা নিতে সাধারণ পরিষদের সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানানোর পর গত শনিবার জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত কিয়াও মোয়ে তুনকে বহিষ্কার করা হয়। তার বদলে জাতিসঙ্ঘের ডেপুটি দূত তিন মং নাইংকে নিয়োগ দেয়া হলেও পদত্যাগ করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের জাতিসঙ্ঘ মিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই পদে কিয়াও মোয়ে তুনই বহাল থাকবেন। তবে ওয়াশিংটন দূতাবাস এখনো জান্তা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। দূতাবাসের বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের সরাসরি নিন্দা জানানো হয়নি আর বলা হয়েছে, দূতাবাস মিয়ানমার রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা অব্যাহত রাখবে। তবে গত মাসে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে পদত্যাগ করেন দূতাবাসের এক কূটনীতিক। এ ছাড়া সেখানকার অন্তত তিন কূটনীতিক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মিয়ানমারের সেনা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান নাগরিক অসহযোগ আন্দোলনে শামিল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অভ্যুত্থানের মাধমে গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখলের পরপরই মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ তা আটকে দেয়। মিয়ানমারের ওই তহবিল এখন অবরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছে নিউ ইয়র্ক ফেড। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নামে গত ৪ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ওই তহবিল স্থানান্তরের অনুরোধ প্রথমে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আটকে দেয়। এরপর মার্কিন কর্মকর্তারাও ওই তহবিল স্থানান্তরের বিষয়টি অনুমোদন না দিয়ে আটকে রাখেন। পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে ওই তহবিল স্থানান্তর স্থগিত করার বৈধ এখতিয়ার দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। নিউ ইয়র্ক ফেড বা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট মিয়ানমারের ওই অ্যাকাউন্টের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মিয়ানমারের টাকা স্থানান্তরের চেষ্টা আটকে দেয়ার ওই ঘটনা আগে জানাজানি না হলেও সম্প্রতি দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ কে›প্রীয় ব্যাংকে নতুন একজন গভর্নর নিয়োগ দিয়ে গনতন্ত্রপন্থী কর্মকর্তাদের আটক করলে নিউ ইয়র্ক ফেডের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের জেরে এর আগে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার দেশটির একাধিক মন্ত্রণালয়ের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর। শুধু তাই নয়, ‘মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশন’ ও ‘মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস পাবলিক কোম্পানি’ নামে দু’টি সরকারি সংস্থাকেও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত করেছে বাইডেন প্রশাসন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে জড়িতদের ওপর বড় অর্থনৈতিক অবরোধ আসবে। সেই সাথে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যও সামরিক জান্তাকে কড়া নির্দেশ দেন তিনি। হোয়াইট হাউজ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে ‘তাতমাদাও’ বা বার্মিজ সেনার একাধিক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হবে। একই সাথে মিয়ানমারে স্বাস্থ্য ও জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত সরঞ্জাম ছাড়া অন্য পণ্যের রফতানি বন্ধ করতে পারে ওয়াশিংটন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল