সামরিক অভ্যুত্থান অসাংবিধানিক
পুলিশের গুলিতে নিহত আরো এক নারী, প্রতিবাদ ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা ; জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান- রয়টার্স ও ভয়েস অব আমেরিকা
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০২:০৪
জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তিনি ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী আং সান সু চির দল ‘দি লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, সামরিক সরকারের নয়। তিনি বৈধ ও নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে, সারা বিশ্বকে জানাতে চান যে, মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান অসাংবিধানিক এবং বিশ্ব যাকে মেনে নেয়নি। রাষ্ট্রদূত ক্যাও মোয়ে তুন বলেন, আমরা আগেকার দিনে ফিরে যেতে চাই না। মিয়ানমারের জনগণ প্রতিবাদের মাধ্যমে বিশ্বকে এ কথাই জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত তুন, বহু দশক ধরে জনগণকে দমন ও শোষণ করার জন্য সেনাবাহিনীর দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, যারা অবর্ণনীয় ও সহিংস পন্থায় জাতিগোষ্ঠী সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছেন, তারা মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধ করেছেন।
তিনি সামরিক সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে, তাদের স্বীকৃতি না দিতে এবং সহযোগিতা না করার জন্য বিশ্ব-সমাজের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। তুন দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘকে ‘কার্যকর যেকোনো পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তুন বলেন, ‘অবিলম্বে সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান, নিরপরাধ জনগণের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আমাদের আরো কঠোর সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।’ এ আহ্বানের পর তিনি জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রশংসিত হয়েছেন। মিয়ানমারের গত নির্বাচনে জয়ী গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে লিখিত বক্তব্যটি পড়তে গিয়ে তুন আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তার দেশের বৈধ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। বার্মিজ ভাষায় শেষ বাক্য বলে এ কূটনীতিক গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের তিন-আঙুল প্রদর্শন করেন এবং ঘোষণা দেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্যই বিজয়ী হবে’। এ ঘটনার পর গতকাল শনিবার ইয়াঙ্গুন পুলিশ সামরিক শাসন বিরোধীদের দমনে কঠোর পদক্ষেপের দিকে গেছে।
১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল এবং মিয়ানমারের নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি ও তার দলীয় নেতাদের অনেককে আটক করার পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি অস্থিরতা চলছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিডোসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে আসেন। পশ্চিমা দেশগুলোও এ অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। একই সাথে কিছু ক্ষেত্রে সীমিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চাপ তৈরি করা হয়েছে।
এ দিকে শনিবার ব্যাপক বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিলেন সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তবে দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরে প্রতিবাদকারীদের জড়ো হওয়ার স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া শনিবার মনওয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নারী নিহত হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করলে তাদের অনেককে আটক করা হয়েছে। ইয়াঙ্গুনে আটককৃতদের মধ্যে অন্তত দু’জন গণমাধ্যমকর্মী রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিডিয়াকর্মী বলেন, ‘তারা আমাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছিল। তবে আমি পালিয়ে পালিয়ে এসেছি।’
তারপরও রাস্তায় নেমে এসেছেন বিক্ষোভকারীরা। ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের একটি গ্রুপ। দিন গড়াতে থাকলে তাদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অভ্যুত্থানবিরোধী গান গেয়ে বিভিন্ন পার্শ্বসড়কে মিছিল শুরু করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ আরো বেশ কয়েকটি শহরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। মধ্যাঞ্চলের শহর মনওয়ার এক বিক্ষোভকারী জানান, বিক্ষুব্ধদের ঘিরে রেখে তাদের ওপর জল কামান প্রয়োগ করা হয়েছে।
আয় আয় টিন্ট নামের বিক্ষোভকারী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর জল কামান ব্যবহার করা হয়েছেÑ মানুষের সাথে এ রকম আচরণ তারা করতে পারে না।’ মান্দালয়ে আটক করা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রয়েছেন অং সান সু চির দল এনএলডি থেকে নির্বাচিত দুই মুসলিম আইনপ্রণেতার একজন উইন মিয়া মিয়া। রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড এবং ফাঁকা গুলি চালিয়ে ইয়াঙ্গুন, মান্ডলে, নেইপিডোসহ অন্যান্য শহরে পুলিশ বিক্ষোভ দমনের এক দিন পর নতুন এ পুলিশি পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। পুলিশের ওই বিক্ষোভ দমন পদক্ষেপে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা