২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষকদের সাথে ভারত সরকারের আলোচনা ব্যর্থ, অবরুদ্ধ দিল্লি

আজ আবারো বৈঠক
-

কৃষি আইনের মতপার্থক্য নিরসনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব আনলেও তা মানতে রাজি হয়নি আন্দোলনকারী কৃষকরা। কৃষক সংগঠনগুলো সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। কারণ তাদের মতে, এটা সময় নষ্ট করার একটা প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়।
মঙ্গলবার বিকেলে দুই পক্ষের আলোচনা কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে। কৃষকদের দাবি অনুযায়ী, আইন প্রত্যাহারে রাজি হয়নি ভারত সরকার। তবে সর্বনিম্ন মূল্য ও স্থানীয় কৃষিবাজার নিয়ে কৃষকদের উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকারপক্ষ। অন্য দিকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কৃষকরা।
কৃষকদের কাছে কমিটি গঠন করে কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছিল মোদি সরকার; কিন্তু কৃষকদের দাবি, সরকারকে নতুন কৃষি আইন আগে বাতিল করতে হবে। আর ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য নিয়ে আইন করতে হবে, যাতে বেসরকারিভাবে যারা কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনেন, তারা এই আইন মানতে বাধ্য থাকেন। সরকার অবশ্য কোনো দাবি মানার ইঙ্গিত দেয়নি। আজ বৃহস্পতিবার আবার বৈঠক হবে।
মঙ্গলবার বেলা ৩টার পর কৃষকদের ৩৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনায় বসেন ভারতের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র ঠোমার, মন্ত্রিসভায় তার সহকর্মী পিযূষ গয়াল এবং জুনিয়র শিল্পমন্ত্রী সোম প্রকাশ। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের আগে কৃষকদের তরফে বলা হয়, সরকার কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় আহ্বান করায় তারা বসতে রাজি হয়েছে। ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা জগজিত সিং বলেন, আমাদের দাবি হলো নতুন প্রবর্তিত আইন বাতিল এবং সর্বনিম্ন মূল্য ইস্যুতে নতুন একটি আইন আনা। সরকার দাবি না মানলে আন্দোলন চলবে।
পূর্বনির্ধারিত আলোচনার তিন দিন আগেই কৃষকদের আলোচনায় বসতে সোমবার আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র ঠোমার। করোনাভাইরাস ও ঠাণ্ডার কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র ঠোমার জানান, গত দুই দিনে তিনি তিনবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করেছেন। কৃষকরা দিল্লি অবরোধের ঘোষণার জেরে এসব সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত কয়েক মাসে আন্দোলনরত কৃষকদের সাথে তৃতীয় দফা আলোচনায় বসেছে ভারত সরকার। প্রথম দফার বৈঠকে ভারতের কৃষি সচিব নেতৃত্ব দিলেও পরের দফায় ছিলেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং ঠোমার ও পিযূষ গয়াল। ১৩ নভেম্বরের ওই বৈঠকে আগামী ৩ ডিসেম্বর ফের বৈঠকে বসার ঘোষণা দেয়া হয়।
কৃষকরা এখনো দিল্লি ঘিরে বসে আছেন। দিল্লিতে ঢোকার আরো একটি রাস্তা গতকাল বুধবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবাদীদের দল ভারী করতে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে আরো কৃষক এসে পৌঁছেছেন, অনেকে পথে আছেন। দিল্লির সীমানায় ট্রাক, ট্রাক্টর, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কৃষকরা বিক্ষোভ-অবস্থান করছেন। তাদের সাথে দুই মাসের খাবার রয়েছে। সাথে রয়েছে নিজেদের ক্ষেতের খড়। রাতে ট্রাক্টরের উপর খড় বিছিয়ে তারা শুয়ে পড়ছেন। কেউ শুচ্ছেন রাস্তাতেই; দিল্লির এই প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতেও।
উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরালা ও রাজস্থান থেকে আসা কৃষকরা এভাবেই প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকদের এই প্রতিবাদের মুখে পড়ে সরকার আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারা এখন কোনোভাবে কৃষকদের আন্দোলন বন্ধ করার ও সময় নষ্টের মনোভাব নিয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। তাই তারা সরকারের ওপর চাপ বিন্দুমাত্র কম করতে রাজি নন।
এ দিন পশ্চিম উত্তর প্রদেশ থেকে কৃষকদের একটা বড় দল এসে দিল্লি ও নয়ডার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। নয়ডা পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ি, বাইক, স্কুটার নিয়ে যারা যাতায়াত করেন, তারা যেন ডিএনডি ফ্লাইওভার ও কালিন্দী কুঞ্জের রাস্তায় না আসেন। কারণ, সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে ঢোকার দু’টি রাস্তা আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লি ঢোকার অন্যতম প্রধান রাস্তাও আংশিক বন্ধ। ফলে দিল্লিতে ঢোকার তিনটি রাস্তা পুরো ও একটি আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement