২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্মেনিয়া-আজারবাইজানকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জাতিসঙ্ঘের

আর্মেনিয়ার ২ জঙ্গিবিমান ধ্বংস ১৩ এলাকা মুক্ত আজারবাইজানের
-

বিরোধপূর্ণ নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানকে যুদ্ধবিরতির প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ প্রধান অ্যান্তেনিও গুতেরেস। আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের চার মিনিটের মাথায় তা ভঙ্গ এবং উভয় পক্ষ থেকে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ আহ্বান জানান তিনি।
নতুন করে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও বিবাদমান দুই পক্ষের হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ভাঙার দায়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয় পক্ষই পরস্পরকে দুষছে। রুশ মধ্যস্থতায় স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতে দ্বিতীয়বারের মতো ওই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল।
শনিবার আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গানজার আবাসিক এলাকায় আর্মেনিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ১৩ জন প্রাণ হারানোর পর এর নিন্দা জানিয়ে জাতিসঙ্ঘ প্রধান এ আহ্বান জানান। গত ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই ব্যাপক লড়াই-সংঘর্ষে বেসামরিক মানুষের ওপর হামলারও নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারেক রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, গানজা শহরে হামলায় শিশুসহ যেসব সাধারণ মানুষ মারা গেছে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘মহাসচিব ১৮ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি উভয়পক্ষকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি অবিলম্বে বাস্তবসম্মত আলোচনা পুনরায় শুরু করারও আহ্বান জানান।’
এ দিকে আর্মেনিয়ার আরো একটি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেছে আজারবাইজান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার আজেরি ভূখণ্ডে হামলার প্রাক্কালে গুলি করে এসইউ-২৫ জঙ্গিবিমানটি ভূপাতিত করা হয়। আগের দিন শনিবারও আর্মেনিয়ার এসইউ-২৫ জঙ্গিবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার কথা জানায় আজারবাইজান।
সর্বশেষ জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করা প্রসঙ্গে আজেরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, স্থানীয় সময় রোববার দুপুরে আর্মেনীয় বিমানটি জাবরাঈল এলাকায় আজেরি ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালানোর চেষ্টা করছিল। এ সময় সেটি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়।
তা ছাড়া আনাদোলু এজেন্সি জানায়, আজারবাইজানের সেনারা জাবরাইল জেলায় ১৩টির বেশি গ্রাম আর্মেনীয় দখল থেকে মুক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। গতকাল সোমবার টুইট বার্তায় তিনি জানান, জাবরাইল জেলার সোলতানলি, আমিরভারলি, মাশানলি, হাসানলি, আলিকেখানলি, গুমলাগ, হাজিলি, গায়ারচিনভেইসলি, নিয়াজগুজলার, কেচেল মেমমেডলি, শাহভেল্লি, হাজী ইসমাইলি ও ইসাগলি গ্রামগুলো আর্মেনীয় দখল থেকে মুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, আর্মেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনী মানবিক যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে আজারবাইজানের বেসমারিক এলাকা ও সেনা অবস্থানের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, তাদের এই হামলায় কয়েকজনের মৃত্যু ও আহত হয়েছে। আজারবাইজানের সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি এলাকা মুক্ত করেছে।
এর আগে আজারবাইজানের সেনাবাহিনী জাবরাইল শহর এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামকে আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনীর দখল থেকে মুক্ত করে। প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ আর্মেনীয় দখল থেকে জাবরাইল, ফুজুলি এবং হদ্রুত শহরের পাশাপাশি ৫০টিরও বেশি গ্রাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ দু’টির মধ্যে বিবাদ বহু পুরনো। ১৯৯৪ সালে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ছয় বছরের সঙ্ঘাতের অবসান হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ নৃশংসতা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে ফের এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৮০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। নাগরনো-কারাবাখ ছিটমহলটিতে আর্মেনীয় খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর বসবাস। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মুসলিম অধ্যুষিত আজারবাইজান থেকে বিচ্ছিন্ন হয় অঞ্চলটি। আর এতে সমর্থন জানিয়ে আজারবাইজানের অভ্যন্তরে বৃহৎ ভূখণ্ড দখলে নিয়ে ছিটমহলটির সাথে সংযোগ স্থাপন করে আর্মেনিয়া।
আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলটি আজারবাইজানের হলেও নব্বইয়ের দশকে দেশ দু’টির মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং বাস্তুচ্যুত হয় ১০ লাখের বেশি। ওই সময়ে মাঝেমধ্যেই অঞ্চলটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই হয়েছে। কিন্তু এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা একেবারেই ভয়াবহ।


আরো সংবাদ



premium cement