২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বান রাশিয়া-ফ্রান্সের

আজারবাইজানকে সমর্থন তুরস্ক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের; কারাবাখে আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণ মেনে নেবে না ফ্রান্স; দুই দেশের আলোচনার ডাক প্রত্যাখ্যান
-

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার প্রতি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া ও ফ্রান্স। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে অবিলম্বে উত্তেজনা নিরসন এবং সঙ্ঘাত পুরোপুরি থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভøাদিমির পুতিন ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। উভয় পক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন দুই নেতা।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, মূলত ম্যাক্রোঁর আগ্রহেই পুতিন-ম্যাক্রোঁ ফোনালাপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফোনালাপে দুই নেতা সঙ্ঘাত বন্ধে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে দ্রুত আলোচনা শুরুর তাগিদ দেন। এ লড়াইয়ে সরাসরি আর্মেনিয়ার পক্ষ নিয়েছে ফ্রান্স। বুধবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ ইস্যুতে নিজ দেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, নাগরনো-কারাবাখে আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণ মেনে নেবে না ফ্রান্স। বুধবার ইউরোপের দেশ লাটভিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি তুরস্কের দেয়া রাজনৈতিক বক্তব্যগুলো (আজারবাইজানের পক্ষে) লক্ষ করেছি, যেগুলোকে আমি বেআইনি ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করি।
এর আগে অবশ্য আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া দুই দেশই আলোচনার ডাক প্রত্যাখ্যান করে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। আজারবাইজানের ভূখণ্ড থেকে আর্মেনীয় বাহিনী প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানায় বাকু। অন্য দিকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে আর্মেনিয়া।
এ দিকে, সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে শর্ত দিয়েছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। তিনি বলেছেন, নাগরনো-কারাবাখ পার্বত্য অঞ্চল থেকে আর্মেনিয়া সেনা প্রত্যাহার করে নিলে তিনি ওই অঞ্চলে তার দেশের সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবেন। তিনি গত বুধবার সীমান্ত সংঘর্ষে আহত আজারি সেনাদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে এ শর্ত বেঁধে দেন। প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বলেন, নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে থেকে আর্মেনীয় সেনাদের নিঃশর্ত প্রত্যাহার করা হলেই কেবল তিনি তার সেনাদেরকে অভিযান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেবেন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশগুলোর একটি সামরিক জোটের সদস্য রাশিয়া। যে জোটে আর্মেনিয়া রয়েছে এবং দেশটিতে একটি রুশ সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে। অবশ্য আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয় দেশের কাছেই অস্ত্র সরবরাহ করে মস্কো। আর মুসলিম দেশ আজারবাইজানকে জোরালো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। তিন দেশই মনে করে আজারবাইজানের ভূখণ্ডে আর্মেনীয় দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। এমন অবস্থানের জন্য বুধবার দেশগুলোর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে রাশিয়া ও তুরস্কের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোও এতে যুক্ত হতে পারে।
কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভূখণ্ড হলেও ইয়েরেভান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। মূলত এ নিয়েই সঙ্ঘাতের সূত্রপাত। নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘ বিবাদের জেরে ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কার্যত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশ। এতে এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ উভয় পক্ষের শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের বেশির ভাগই আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে জানা গেছে। নতুন করে সঙ্ঘাতের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement