২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভূমধ্যসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে ফ্রান্স

তুরস্ক-গ্রীস উত্তেজনা
-

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ফ্রান্স। তুরস্কের সঙ্গে গ্রিসের উত্তেজনার মাঝে ভূমধ্যসাগরে পূর্বাংশে দু’টি রাফাল যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর একটি রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ওই অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব যুদ্ধোপকরণ পাঠানো হচ্ছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে ফ্রান্সের সশস্ত্র বাহিনী মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার সুবিধার্থে তুরস্কের অনুসন্ধান স্থগিত করা উচিত। বুধবার গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের সঙ্গে টেলিফোন আলাপের সময় পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমায় তুরস্কের পক্ষ থেকে একতরফাভাবে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্ক তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কিন্তু গ্রিস বলছে তুরস্ক যে এলাকায় তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছেন সেটি গ্রিসের নিজের এলাকা। গ্রিস ও ফ্রান্স দুই দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, অস্থায়ীভাবে তার দেশ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে ফ্রান্স প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এর পাশাপাশি তিনি গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের কথাও বলেন। ম্যাক্রোঁ তার বিবৃতিতে বলেছেন, ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক আইন বহাল রাখতে সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে ফ্রান্স। গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রিক সেনাবাহিনীর সাথে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রেট দ্বীপের উপকূলে প্রশিক্ষণ মহড়া চালিয়েছে ফ্রান্সের সেনাবাহিনী। গ্রিসের প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্সকে। এটি ফরাসি প্রেসিডেন্টের সমর্থনের প্রথম প্রকাশ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে ফোনালাপের পর গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস ফরাসি ভাষায় এক টুইটে বলেন, ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গ্রিসের একজন সত্যিকারের বন্ধু এবং ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক আইনের জোরাল সমর্থক।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান না চালানোর জন্য তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার ওরাক রেইস নামে তুরস্কের একটি ড্রিলিং জাহাজ ওই অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য রওনা হয়েছে। আর সঙ্গে তুরস্কের নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজও রয়েছে। ওই জাহাজ পাঠানোর পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়। গ্রিসও তুর্কি জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে।
এই নিয়ে ন্যাটো সদস্য দুই প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে উত্তেজনা ও কথার লড়াই চলছে। জুলাইতে তুরস্ক গ্রিসের দ্বীপ কাস্তেলরিজোর উপকূলে তাদের জরিপ জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল। তখন দেশ দু’টির মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সভাপতির চলতি দায়িত্বে থাকা জার্মানির মধ্যস্থতায় তখনকার মতো বিরোধ মিটে যায়।
কিন্তু তুরস্ক নতুন করে জরিপের উদ্যোগ নেয়ায় ফের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছ। গ্রিস তুরস্ককে তাদের জরিপ জাহাজ ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছে। এ পরিস্থিতিতে ইইউ উভয়পক্ষকে সংলাপে বসার আবেদন জানিয়েছ। গ্রিস ইইউয়ের সদস্য রাষ্ট্র। গ্যাস মজুদ ও সমুদ্রসীমা নিয়ে গ্রিস-তুরস্কের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা সামনে আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গ্যাসসমৃদ্ধ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অনুসন্ধান নিয়ে আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। তুরস্ক, গ্রিস, সাইপ্রাস, ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই এ নিয়ে বিরোধ চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement