২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ

কলম্বোর একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া : এএফপি -

শ্রীলঙ্কায় গতকাল বুধবার নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এই নির্বাচনে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় দল রাজাপাকসে ভাইদের শক্ত সমর্থন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাদের পরিবারের কমপক্ষে চারজন সদস্য আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং রাজাপাকসে দলের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন তাদের রাজনৈতিক বংশকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নির্বাচনটি মূলত এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীজনিত কারণে দুবার পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় এই ভাইরাসে প্রায় দুই হাজার ৮৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পোলিং বুথগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব রাখা হয়েছিল। ভোটারদের ব্যালট চিহ্নিত করতে নিজস্ব কলম আনতে বলা হয়। ভোটগ্রহণ শেষে আজ বৃহস্পতিবার গণনা শুরু হবে এবং আগামীকাল শুক্রবার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে অঙ্কের হিসেবে এগিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। গত এক বছরে দেশে যে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, এই নির্বাচনের ফলে তা কাটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গোটা দেশে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত। ২২৫টি আসনের জন্য লড়াই করছেন ৭০টি দলের সাত হাজার ৪৫২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৩১৩ জন নির্দলীয় প্রার্থীও আছেন। করোনাকালে এই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচন ঘিরে অতিরিক্ত উৎসাহ আছে।
এক বছর আগে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। পডুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) দল থেকে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। গোটাবায়া আবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের বড় ভাই। এসএলপিপির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান মাহিন্দা। গোটাবায়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মাহিন্দার। ফলে গোটাবায়া প্রেসিডেন্ট হয়েই ঋণশোধ করেছেন। এসএলপিপি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তাদের সরকার গড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন গোটাবায়া। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহিন্দা। গোটাবায়া সাময়িক সময়ের জন্য সংবিধান বাতিল করে দিয়েছিলেন। সে কারণেই মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান ফের কার্যকর হবে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। এই নির্বাচনে যে দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, সে দলই সরকার গঠন করবে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, দেশের ভেতর রাজাপাকসের সরকার নিয়ে বহু সমালোচনা আছে। রয়েছে ক্ষোভ বিক্ষোভও। যে ভাবে রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করেছিলেন, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় এ বারের নির্বাচনেও রাজাপাকসে জয়ী হবেন বলে তাদের ধারণা। সমীক্ষাতেও তিনি এগিয়ে। বস্তুত, নির্বাচনে এক দিকে রাজাপাকসের এসএলপিপি, অন্য দিকে বিরোধীরা। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে কোনো ঐক্য গড়ে ওঠেনি। মূল বিরোধী দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গিয়েছে। নতুন দলের নাম এসজেবি। দু’টি দলই আলাদা আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
প্রশ্ন হলো, রাজাপাকসের দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে কি না। অর্থাৎ, দুই-তৃতীয়াংশ ভোট তারা পাবে কি না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু তামিল এবং মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। গোটাবায়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এই দুই পক্ষের ভোটই গিয়েছিল রাজাপাকসেদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বছর ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় সংখ্যালঘু ভোটের একাংশ মাহিন্দা পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে আছে শ্রীলঙ্কা। করোনার কারণে পর্যটন শিল্প সম্পূর্ণ বসে গিয়েছে। তার উপর বিপুল দেনায় ভুগছে সরকার। যার একটা বড় অংশ চীনের ঋণ। একইসাথে করোনাকালে একের পর এক বেসরকারি সংস্থা বন্ধ হচ্ছে। প্রায় তিন লাখ কর্মী এর ফলে কাজ হারাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে এই সব কিছুর সাথে লড়তে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। ফলে সব দিক থেকেই শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।


আরো সংবাদ



premium cement