২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থার হুমকি চীনের

হংকং নিরাপত্তা আইন
-

হংকং সম্পর্কিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নকারীদের সাথে ব্যবসায়ে জড়িত ব্যাংকগুলোর ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে গেলে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে চীন। হংকংয়ের আমব্রেলা আন্দোলনের কর্মী সাবেক ছাত্র নাথান ল যখন দেশ ছেড়েছেন এবং স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেয়ার ওপর হংকং সরকার যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তখন চীন সরকার এ হুমকি দিলো।
মার্কিন সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে হংকং স্বায়ত্তশাসন আইন অনুমোদন করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের জন্য এটি হোয়াইট হাউজে পাঠানোর পর গতকাল শুক্রবার চীনের পক্ষ থেকে এ হুমকি এলো। চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং এতে আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ভুল পথে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে চীন অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে তার জবাব দেবে। মঙ্গলবার চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৬২ সদস্যের সম্মতিতে নতুন যে জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে, তাতে হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশী বাহিনীর সাথে আঁতাতের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
হংকংয়ের সরকার মঙ্গলবার রাত থেকেই আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দেয়। নতুন এ আইনটিকে হংকংয়ের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকর্মীরা। আইনটি কার্যকরের প্রতিবাদে বুধবার শহরটির কয়েক হাজার বাসিন্দা বিক্ষোভও করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস, পানিকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করতে হয়েছে। আইনটির সমালোচকরা বলছেন, ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য যখন চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তর করেছিল, তখন ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থার’ চুক্তিতে পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য শহরটির অধিক স্বায়ত্তশাসন অক্ষুণœ এবং বাসিন্দাদের সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকার দেয়ার কথা বলা হলেও ২৩ বছরের মাথায় করা নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন তার ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’। এই আইনের মাধ্যমে হংকংয়ের বাসিন্দাদের বাকস্বাধীনতা পুরোপুরি খর্ব হলো বলেও অভিযোগ করছেন তারা। সমালোচকদের এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। তারা বলছে, হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও বিদেশী হস্তক্ষেপ রুখতে নিরাপত্তা আইন কার্যকর জরুরি হয়ে পড়েছিল। নতুন নিরাপত্তা আইনে গণতন্ত্রপন্থী বেশ ক’জন নেতাকর্মীকে আটকের মধ্যেই হংকংয়ের এক রাজনৈতিক নেতা চীন নিয়ন্ত্রিত এ শহরটি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৪ সালে হংকংয়ের ‘আমব্রেলা আন্দোলনের’ কর্মী সাবেক ছাত্রনেতা নাথান ল। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নিজেই তার হংকং ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাবেক এ ছাত্রনেতা এখন বাইরে থেকেই হংকংয়ের গণতন্ত্রের জন্য লড়বেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, এই আন্দোলন এখনো সজীব। ঝুঁকি থাকলেও হংকংয়ের মানুষ হাল ছাড়বে না । হংকংয়ে নতুন এ আইন বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছেÑ মঙ্গলবার এমন ঘোষণা আসার অল্প সময় পরই নাথান ল তার দল ডেমোসিসতো পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। হংকংয়ের আরেক গণতন্ত্রপন্থী নেতা জশুয়া ওংকে সাথে নিয়ে ল এই দলটি গঠন করেছিলেন। চীনের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন এ জাতীয় নিরাপত্তা আইনে হংকংয়ে গণপরিবহনের কোনো স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। শহরটিতে ২০১৯ সালে হওয়া টানা কয়েক মাসের আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের প্রায়ই গণপরিবহন ও সরকারি বিভিন্ন ভবন ভাঙচুর করতে দেখা গেছে। নতুন আইনে পুলিশকে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য নেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় হংকংয়ের বাসিন্দাদের অনলাইন স্বাধীনতাও খর্ব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এ আইনে এরই মধ্যে অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশ চীনের চাপিয়ে দেয়া এ নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করলেও কিউবাসহ বেশ কয়েকটি দেশ বেইজিংয়ের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৪তম অধিবেশনে হাভানা বলেছে, জাতিসঙ্ঘ সনদে থাকা অপরিহার্য নীতির মধ্যে কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। চীনের নতুন এ জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে যেসব দেশ সমালোচনা করেছে তাদেরকে সতর্ক করেছে বেইজিং।
তারা বলেছে, হংকং নিয়ে অন্য কারো মাথা ঘামাতে হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement