২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জনতাত্ত্বিক প্লাবনের আশঙ্কা

বদলে গেল কাশ্মিরের স্থায়ী বাসিন্দার সংজ্ঞা

নতুন আইনে কেবল নিম্ন চাকরিই সংরক্ষিত; বহিরাগতদের স্থায়ী বসতি স্থাপনের আশঙ্কা
-

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ ও রাজ্যের মর্যাদা আগেই তুলে নিয়েছে মোদি সরকার। তার পরিবর্তে ওই রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এবার জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখ নামে দু’টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের সংজ্ঞাও বদলে দিলো ভারত। গত বুধবার গভীর রাতে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সংজ্ঞা বদলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
এই আইনকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। গত আগস্টে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মিরের ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’ তুলে নিয়ে তাকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার আট মাস পর এই নতুন আইন আনা হলো। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যারা জম্মু-কাশ্মিরে ১৫ বছর ধরে বাস করছেন বা সাত বছর সেখানে পড়াশোনা করে সেখান থেকেই দশম বা দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়েছেন তারা স্থায়ী বাসিন্দার (ডোমিসাইল) প্রশংসাপত্র পেতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকার, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি গবেষণাগারের যেসব কর্মী জম্মু-কাশ্মিরে কাজ করেছেন, তাদের সন্তানরাও সুযোগ পাবেন।
কেবল এই স্থায়ী বাসিন্দারাই জম্মু-কাশ্মির সরকারের নন গেজেটেড স্তরের লেভেল ফোর পর্যন্ত সব পদে আবেদন করতে পারবেন। লেভেল ফোরের পদের মধ্যে আছে কনস্টেবল, জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট। বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিই চতুর্থ শ্রেণীর উপরে (২৫,৫০০ টাকা) বেতনক্রমের পদের উর্ধ্বের জন্য বিবেচিত হবেন না, যদি না তিনি জম্মু ও কাশ্মির কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাসিন্দা হন।
অর্থাৎ, এই নতুন আইন অনুসারে জম্মু ও কাশ্মিরের বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষণ থাকবে কেবল মাত্র জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ও পিওনের মতো পদের জন্য। বাকি সব পদের জন্য আলাদা করে কোনো সংরক্ষণ নেই। ভারতের যেকোনো নাগরিকই সেসব পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর আগে সব চাকরিই সংরক্ষিত ছিল স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য। জমির মালিকানাও তাদের ছিল। এই আইনে নাগরিকদের সংজ্ঞাও বদলে গিয়েছে।
এ নতুন আইনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিরোধী নেতা ও অন্যরা সবাই বলতে শুরু করেছেন, এভাবে নতুন আইনে কেবল কম বেতনের চাকরিই সংরক্ষিত রইলো এখানকার বাসিন্দাদের জন্য।
‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’-এর প্রধান ওমর আবদুল্লাহ কয়েকদিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি এই নতুন আইনকে ‘অপমান’ বলে আক্রমণ করছেন কেন্দ্রকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সাথে দেশ যখন লড়ছে, এ রকম একটা সময়ে কাশ্মিরের বাসিন্দা কারা সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেয়ার জন্য তিনি কড়া সমালোচনা করেছেন।
তিনি লেখেন, ‘যখন আমাদের সব মনোযোগ রয়েছে করোনা সংক্রমণের মোকাবেলার দিকে, তখনই সরকার একটি নতুন অধিবাসী আইন নিয়ে এলো জম্মু ও কাশ্মিরের জন্য।’ তার মতে, এটা ‘অপমান’, কেননা প্রতিশ্রুত কোনো নিরাপত্তাই দিচ্ছে না এই নয়া আইন। তিনি আরো জানান, ‘এই নতুন আইন এমনই ফাঁপা, দিল্লির আশীর্বাদে নতুন যে দল তৈরি করা হয়েছে, যারা নতুন আইন আনতে দিল্লিকে আহ্বান জানিয়েছিল, তারাও বাধ্য হচ্ছে এর সমালোচনা করতে।’
আগস্টে সংবিধানের ৩৭০ ধারা তোলার সময় থেকেই অবরুদ্ধ ছিলেন আবদুল্লাহ। তিনি যে দলের কথা বলতে চেয়েছেন সেটিই হলো ‘জম্মু কাশ্মির আপনি পার্টি’। তারাও জানিয়েছে, নতুন এই নিয়ম মেনে নেয়া সম্ভব নয়। দলীয় নেতারা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আলোচনার বিষয় ছিল কাশ্মিরের নাগরিক সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়েই। পরে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দু’জনেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, তারা জম্মু ও কাশ্মিরের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে বদ্ধপরিকর। আইনটি ‘বহিরাগতদের স্থায়ী বসতি স্থাপন’ সম্পর্কে কাশ্মিরিদের মধ্যে আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পদক্ষেপ উপত্যকাটিকে ‘জনতাত্ত্বিক প্লাবনের’ দিকে পরিচালিত করবে।
ভারতশাসিত কাশ্মিরের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘এটি আইনি প্রতারণার একটি অংশ। আমি মনে করি বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও কেউ কেউ রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকছেন না। স্পষ্টতই, এটি জনসংখ্যার পরিবর্তন করার চেষ্টা, কেবল পরিবর্তনই নয়; এটি জনতাত্ত্বিক প্লাবন ঘটাবে।’ তিনি বলেন, আইন পরিবর্তন চাকরির ইস্যু থেকেও অনেক বড়। আমি চাকরি নিয়েও ভাবছি না।’ অঞ্চলভিত্তিক আইনবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক শেখ শওকত হুসাইন বলেছেন, ‘এটি কেবল শুরু। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পুরো উদ্দেশ্য ছিলÑ এ অঞ্চলে বাইরের লোকদের বসতি স্থাপন করা এবং রাষ্ট্রের জনসংখ্যার পরিবর্তন ঘটানো। এখন এটি বিভিন্ন শ্রেণীর ভারতীয়দের এই অঞ্চলে আইনিভাবে বসতি নির্মাণের অধিকার প্রদান করবে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement