১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উগ্র ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জার্মান মুসলমানদের

হামলার পর নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসলিমরা
-

তুর্কি বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের টার্গেট করে জার্মানির একটি সিসা বারে চালানো বন্দুক হামলায় ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জার্মানির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। এ হামলা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ফ্যাসিবাদী ও ইসলামভীতিজনিত সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে থাকার ভয়কে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এ ধরনের হুমকি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অল্টারনেটিভ ফর জার্মানিসহ (এএফডি) উগ্র ডানপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গত বুধবার রাতে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় ছোট্ট শহর হানাউয়ে হামলায় নিহত একজনের চাচাতো ভাই বলেন, ‘কথা অনুযায়ী অবশ্যই কাজ করা উচিত।’ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদও বলেছেন যে এসব কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ও পরোক্ষভাবে উসকানিদাতাদের নজরদারির আওতায় আনা উচিত। ভুক্তভোগীদের একজনের স্বজন শুক্রবার বলেন, আমরা এখনো বিশ্বাস করি না যে, এ ধরনের মানসিকতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা জানি যে এখনো এমন একটি সমাজ রয়েছে যা বৈচিত্র্য পছন্দ করে। এই সমাজে ফ্যাসিবাদী মানসিকতা এবং ফ্যাসিবাদী সংগঠনগুলোর কোনো স্থান নেই। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ কমাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানিতে রক্ষণশীল ডানপন্থীদের উত্থান নিয়ে আগে থেকেই সেখানকার মুসলিমদের মধ্যে শঙ্কা দানা বাঁধছিল। দেশটিতে বাড়ছে বিদেশ থেকে আসা মুসলিমদের টার্গেট করে চলা সাম্প্রদায়িক হামলার সংখ্যা। এমন অবস্থায় নিরাপত্তা শঙ্কায় থাকা মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, জার্মানিতে তারা কখনোই এত অনিরাপদ বোধ করেননি। অভিবাসীদের ওপর প্রচণ্ড ঘৃণা থেকেই এসব হামলা চালানো হয়। দেশটির সব থেকে বড় ট্যাবলয়েড বিল্ড জানিয়েছে, হামলাকারী সেখানে দায় স্বীকার করে একটি চিঠি রেখে যায়। সেখানে তার ডানপন্থী উগ্র দর্শনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
জার্মান সরকারও বলছে, বর্ণবাদী উগ্র আদর্শের কারণেই এ হামলা হয়েছে। যেই সিসা বার দু’টিতে হামলা হয়েছে সেগুলোতে মূলত ওই শহরের অভিবাসীদের আনাগোনা ছিল। নিহতের মধ্যেও প্রায় সবাই তুর্কি বংশোদ্ভূত। এ হামলাই প্রমাণ করে জার্মানিতে মুসলিম ও ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার যে বিস্তার সম্প্রতি চোখে পড়ছে তা কত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
এ নিয়ে আতঙ্কিত দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়। দেশটিতে থাকা মসজিদগুলোর সব চেয়ে বড় সংস্থা ডিটিব। তারা জানিয়েছে, বছরে জার্মানির মসজিদগুলোকে লক্ষ্য করে ছোট-বড় প্রায় ১০০ হামলা হয়ে থাকে। শুধু গত কয়েক সপ্তাহেই উনা, হাগেন, এসেন ও বিয়েলফেল্ডে একাধিক মসজিদে হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা চান মুসলিমরা। এগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আইজিএমজির নেতা আইমান মাজিয়েক।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনই জার্মানির ভাবা উচিত। যেসব জায়গায় ইতোমধ্যে হামলা হয়েছে সেগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারের উচিত সেখানে পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা। আইজিএমজির মহাসচিব আবদাস সামাদ ইয়াজিদিও একই কথা বলেন। তার ভাষায়, মুসলিমরা জার্মানিতে এখন খুবই অনিরাপদ বোধ করছে। ডানপন্থীদের এমন উত্থান আগে কখনো দেখা যায়নি।
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৮ সালে শুধু মুসলিমদের লক্ষ্য করেই অন্তত ৯৮০টি হামলা হয়েছে। এতে ওই বছর আহত হয়েছিলেন ৪০ জনেরও বেশি মুসলিম। এ নিয়ে আইজিএমজি জানায়, এ সংখ্যা দিয়ে ঘটনার প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে না। হামলা ছাড়াও সমাজে ডানপন্থীদের উত্থান হচ্ছে তার প্রভাব সংখ্যালঘুরা এড়াতে পারছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement