আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধাপরাধ করেছে ব্রিটিশ বাহিনী\
- বিবিসি ও সানডে টাইমসের অনুসন্ধান
- ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আফগানিস্তান ও ইরাকে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রিটেশ সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। বিবিসি প্যানোরমা ও ব্রিটিশ পত্রিকা সানডে টাইমসের এক অনুসন্ধান দল ১১ জন ব্রিটিশ গোয়েন্দার সাথে কথা বলেছে, যারা জানিয়েছেন ওই দুটি দেশে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
সংশিষ্টরা বলছেন, ওই সব হত্যাকাণ্ডের জন্য সৈন্যদের বিচার শুরু হওয়া উচিত ছিল। যদিও অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ প্রমাণবিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ বাহিনী যখন ইরাকের নিয়ন্ত্রণ নেয়, সে সময় হওয়া যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করেছে ইরাক হিস্টোরিক অ্যালেগেশন টিম বা ইহাট। একইভাবে আফগানিস্তানে হওয়া যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করেছে অপারেশন নর্থমুর নামে আরেকটি প্রকল্প।
এই দুটি তদন্তের ভিত্তিতে নতুন সব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি প্যানোরমা এবং সানডে টাইমসের তদন্ত দল।
ব্রিটিশ সরকার পরে ইহাট ও অপারেশন নর্থমুর দুটি তদন্তই বন্ধ করে দিয়েছিল। ফিল শাইনার নামে একজন আইনজীবী ইহাটের কাছে এক হাজারের বেশি কেস স্টাডি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইরাকে মক্কেল পাওয়ার জন্য তিনি মধ্যস্থতাকারীদের অর্থপ্রদান করেছিলেন- এমন অভিযোগ ওঠার পর তাকে ওই মামলার আইনজীবী হিসেবে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এরপরই ওই তদন্ত দুটি সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ইহাট ও অপারেশন নর্থমুরের সাবেক গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মূলত অপরাধ তদন্ত বন্ধ করার জন্য সরকার ফিল শাইনারের ঘটনাটিকে অজুহাত হিসেবে কাজে লাগায়। ইহাট ও অপারেশন নর্থমুরের তদন্ত করা কোনো ঘটনারই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
ইহাটের একজন গোয়েন্দা প্যানোরমাকে বলেছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আদতে সৈন্য বা অফিসার- কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। আরেকজন গোয়েন্দা বলেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধের শিকার হয়েছে তাদের বাজেভাবে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি একে বিরক্তিকর বলব। আমার ওই পরিবারগুলোর জন্য খারাপ লেগেছে তারা বিচার পাচ্ছে না। একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আপনি কিভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন?
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠা বেশ কয়েকটি ঘটনা প্যানোরমা নতুন করে অনুসন্ধান করেছে। এর মধ্যে ইহাটের তদন্ত করা এমন একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে ২০০৩ সালে বসরায় টহল চলাকালে একজন ইরাকি পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে একজন ব্রিটিশ সৈন্য। রিয়াদ আল মোসায়ি নামে ওই পুলিশ সদস্যকে একটি সরু গলির মধ্যে গুলি করা হয়েছিল, পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। ঘটনাটি তদন্ত করেছিলেন মেজর ক্রিস্টোফার সাস ফ্রাঙ্কসেন, তিনি সে সময় ওই ব্রিটিশ সৈন্যের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রিটিশ সেনার কাজকে বৈধতা দিয়ে মেজর সাস ফ্রাঙ্কসেন তদন্ত শেষ করেন। তার বক্তব্য ছিল, ওই ইরাকি পুলিশ কর্মকর্তা প্রথমে গুলি ছুড়েছিলেন এবং ব্রিটিশ সৈন্য কেবল আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছিলেন।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, আরেকজন ব্রিটিশ সৈন্য ওই ঘটনার সাক্ষী এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন ইরাকি পুলিশ সদস্যই প্রথমে গুলি চালায়। ইহাট গোয়েন্দারা দুই বছর ধরে এ ঘটনার তদন্ত করেন এবং ঘটনার সাক্ষী বলে দাবি করা সৈন্যসহ মোট ৮০ জন ব্রিটিশ সৈন্যের সাক্ষাৎকার নেন। কিন্তু তিনি গোয়েন্দাদের জানান যে তিনি ওই সরু গলিতে ছিলেন না। ইহাটের কাছে দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, মেজর সাস ফ্রাঙ্কসেনের তদন্ত প্রতিবেদন যথার্থ নয় এবং এতে বলা হয়েছে যে আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী, যা সত্য নয়। তিনি জানান যে তিনি একটিমাত্র গুলির শব্দ শুনেছেন, যার মানে দাঁড়ায় যে, ইরাকি পুলিশ সদস্য মোটেও গুলি ছোড়েনি। ইহাট অন্য যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তারাও সেটি নিশ্চিত করেছেন। গুলি করে হত্যার জন্য ওই সৈন্যের এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মেজর সাস ফ্রাঙ্কসেনের বিচার হওয়া উচিত বলে গোয়েন্দারা তাদের রিপোর্টে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু সামরিক বাহিনীর কৌঁসুলিরা কাউকে বিচারের মুখোমুখি করেননি। মেজর সা -ফ্রাঙ্কসেনের আইনজীবী জানিয়েছেন, আমার মক্কেল ইহাটের তদন্ত সম্পর্কে কিছু জানেন না এবং ইহাটের প্রাপ্ত প্রমাণাদির মান সম্পর্কেও মন্তব্য করতে পারবেন না। এবং সে তদন্তে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ব্রিটিশ আইনে কেন কোনো সৈন্যকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি, তাও তিনি বলতে পারবেন না।
২০১৪ সালে সন্দেহভাজন ৫২টি হত্যার অভিযোগ তদন্তে ব্রিটিশ সরকার অপারেশন নর্থমুর শুরু করেছিল। রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ গোয়েন্দারা কোনো আফগান সাক্ষীকে জেরা করার আগেই সরকার ওই তদন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। নর্থমুর দলের একজন গোয়েন্দা বলেছেন, দুইপক্ষের সাথে কথা বলার আগে আমি আমার কাজ শেষ করতাম না। কাজ শেষ করার পর যদি দেখেন আপনার কাছে কেবলমাত্র ব্রিটিশদের পক্ষের ভাষ্য আছে, তাহলে এটা কিভাবে তদন্ত হলো? আমার বক্তব্য হচ্ছে, ওই প্রতিটি মৃত্যুর তদন্ত হওয়া উচিত এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আইন মেনে ওই সব দেশে অপারেশন চালানো হয়েছে এবং যেকোনো অভিযোগের পূর্ণ তদন্ত করা হয়েছে। এবং ওই সব দেশে যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটেছে বলে বিবিসির যে দাবি, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ নিয়ে প্যানোরমার এই রিপোর্ট আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিবিসি ওয়ানে প্রচারিত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা