১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হংকংয়ের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে

-

হংকংয়ে শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতভর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল বুধবারও এই আন্দোলন চলমান ছিল। কয়েক মাস ধরে উত্তাল হংকংয়ে অস্থিরতা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার গুলি ছোড়ে ও পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।
পুলিশ আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরিয়ে নিতে চাইছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার নগরের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস বিক্ষোভ চলেছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের সিদ্ধান্ত পুলিশের কৌশলগত পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। সংবাদদাতারা বলছেন, পুলিশ এত দিন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপসারণ কার্যক্রম বহুলাংশে এড়িয়ে গেছে। শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে আজ বৃহস্পতিবার সব স্কুলের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হবে। বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশনে টানা তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। সকাল থেকে স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছিল। বুধবার সকালে ইউন লং এলাকায় একদল বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড বসিয়ে রাস্তা অবরোধ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ছাত্রনেতা-কর্মীরাও এই অঞ্চলটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। অন্য দিকে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মূল ভূখণ্ডের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য সীমান্ত পার করে চীনে আনা হয়েছে। লেজিসলেটিভ কাউন্সিল নামে পরিচিত নগরীর পার্লামেন্টের একটি অধিবেশন সংক্ষিপ্তভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিরোধী রাজনীতিবিদরা পুলিশি বর্বরতার অভিযোগে নিরাপত্তা প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের আন্দোলনের মুখে গতকালের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। গতকাল দুপুরে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়ার উদ্দেশ্যে বিক্ষুব্ধ জনতাকে একত্র হতে দেখা যায়। কালো পোশাক পরা বিক্ষোভকারীরা মূল ভূখণ্ডের ব্যাংকের একটি শাখাতেও ভাঙচুর চালিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহে রাস্তায় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হংকংয়ের আর্থিক কেন্দ্রস্থলে মধ্যাহ্নভোজের সময় বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। সপ্তাহের প্রথম দিনেই আন্দোলন চলার ঘটনা এই প্রথম। শুক্রবার ২২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী মারা যান। এ ঘটনার পর সপ্তাহান্তে নজরদারি চালায় পুলিশ। তবু সোমবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন হংকংবাসী। এক সপ্তাহ আগে পুলিশি অভিযানের সময় গাড়ি পার্কের কাছে পড়ে আহত হওয়া অ্যালেক্স চাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবারে এক পুলিশ কর্মকর্তা আন্দোলনরত এক কর্মীকে গুলি করলে সহিংসতা আরো বেড়ে যায়। সে দিনই বিক্ষোভকারীরা সরকারের এক সমর্থকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। মঙ্গলবার পুলিশ হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিইউএইচকে) মাঠে কাঁদানে গ্যাস ও পানিকামান নিয়ে সরে যায়। বিক্ষোভকারীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট ও পেট্রলবোমা ছোড়েন। সারা রাত ধরে বিস্ফোরণ, ধোঁয়া ও রাবার বুলেটের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, এই আন্দোলন কেবল হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করার জন্য চলছে না। এটি রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং হংকংবাসীদের যে অধিকারগুলো পাওয়া উচিত, তা রক্ষার মানবিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর মেডিক্যাল প্রতিনিধিরা অন্তত ৭০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কমপক্ষে চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার ছাত্রপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার জন্য তারা আদালতের নির্দেশনা চেয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement