Naya Diganta

পতনের ছোবলেই আবার পুঁজিবাজার

- বাজার থেকে চলে গছে ৫ হাজার ৭৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা
- আবারো চরম বিক্রির চাপে দেশের পুঁজিবাজার

ইতিবাচক পথে দাঁড়াতেই পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। পতনের ছোবল থেকে ক্ষণিকের মুক্তির পরই আবারো সেই ছোবলে পড়তে হচ্ছে। নানান আতঙ্ক বাজারকে পতনের গ্রাস থেকে মুক্ত করতে পারছে না। প্রতিদিনের লেনদেনে টাকার পরিমাণ ও শেয়ার বিক্রি গতকালও বেড়েছে। কিন্তু বাজার থেকে চলে গেছে ০.৮১ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ৭৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১৯টি খাতের মধ্যে ১৮টি খাতই লোকসানের শিকার। মাত্র ব্যাংকিং খাত গতকাল দর বৃদ্ধিতে ছিল। আতঙ্কিত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। কোনো ধরনের স্বস্তি পাচ্ছেন না তারা। প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটাল বলছে, গতকাল বাজারে বিক্রেতা ৭০ শতাংশ থাকলেও বাজারে বিক্রির চাপ ছিল ৭৭ শতাংশ। সেখানে ক্রেতার চাপ ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পতনের পেছনে ক্যাপিটাল গেইনের উপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন করে কর আরোপ করছে এমন খবরের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে অর্জিত মূলধনি আয়ে কর বসাতে যাচ্ছে বলে একটি খবর ছড়িয়েছে। ফলে গতকাল বাজারে বড় পতন হয়েছে। তবে এমন খবর সত্য নয় বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এটি আগের মতোই অব্যাহতি থাকছে।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেনের সূচনায় বাজার যেমনটা ছিল ঘণ্টাখানেক পর তা উল্টোপথে চলতে শুরু করে। বাড়তে থাকে সূচক থেকে পয়েন্ট হারানোর পরিমাণ। পাশাপাশি দর হারানো কোম্পানির সংখ্যাও বেড়ে যায়। দুই ঘণ্টার লেনদেনে যে পরিমাণ সূচক হারায় তার চেয়ে দ্বিগুণ পয়েন্ট চলে যায় দিন শেষে সূচক থেকে। একমাত্র ডিএসই-৩০ সূচক ইতিবাচকে ছিল। দিনশেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬.১৫ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৫৬৯.৬৮ পয়েন্টে এবং শরীয়াহ সূচক ১২.৩৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ২২১.৭৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ২.১৪ পয়েন্ট নতুন করে যুক্ত হয়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৯৯৩.৯৯ পয়েন্টে।
লেনদেনে টাকা ও শেয়ার বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। ১৮ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজাার ৯৫৪টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে ডিএসইতে ৬৬৩ কোটি ৪৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা বাজারমূল্যে। যেখানে রোববার লেনদেন হয়েছিল ৬১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৮৬টির, কমেছে ২৭৭টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টির। এখানে এ শ্রেণীর ১৬৬টি কোম্পানি দর হারিয়েছে। আর ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২২টি।
আর ব্লক মার্কেটে ৩৭টি কোম্পানি গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়। তবে এসব কোম্পানির মোট ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ২৭৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৬৭ কোটি ৬০ লাখ ১৬ হাজার টাকা বাজারমূল্যে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের। কোম্পানির ২৫ লাখ ৭ হাজার ৪৫০টি শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩০ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ওরিয়ন ইনফিউশনের ৯ কোটি ৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার, বিএসআরমের সাত কোটি ৬৫ লাখ টাকার, লাভেলোর তিন কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার টাকার এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসির ২ কোটি ৮৯ লাখ ৯২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসই-৩০ শুধু বেড়েছে ১৭.৬৬ পয়েন্ট। অপর দুটি কমেছে। সিএএসপিআই কমেছে ৬১.৪৬ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স কমেছে ৪১.৬০ পয়েন্ট। আর এক কোটি ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯৩ টাকা বাজারমুল্যে। রোববার লেনদেন হয়েছিল ১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার। সিএসইতে ২২১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৮টির, কমেছে ১২০টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি কোম্পানির।