দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাতের ভূমিকা
- ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
জাকাত অর্থ বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। ফিকহের পরিভাষায় জাকাত হলো আর্থিক ইবাদত। ইসলামী পরিভাষায়- নিজের ধনসম্পদের একটি অংশ গরিব মিসকিন ও অভাবী লোকদের মধ্যে বণ্টন করাকে জাকাত বলা হয়। যাদের কাছে বাৎসরিক যাবতীয় খরচের পর সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের সমমূল্যের সম্পদ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা রৌপ্যের সমমূল্যের সম্পদ গচ্ছিত থাকে, তাদের ওপরই জাকাত ফরজ। গচ্ছিত সম্পদের ২.৫ শতাংশ জাকাত দিতে হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর জাকাত দেয়া ইবাদতের মতো ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎ কাজ করেছে, নামাজ কায়েম করেছে এবং জাকাত প্রদান করেছে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার, তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৭)
ইসলাম বলে গচ্ছিত সম্পদের এক শ’ ভাগের ২.৫ শতাংশ জাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ বাৎসরিক যাবতীয় খরচের পর কারো কাছে যদি ১০ লাখ টাকা গচ্ছিত থাকে তাকে ২.৫ শতাংশ হারে হিসাব করে দিতে হবে।
যেমন- ১০০ টাকায় ২.৫ টাকা, এক হাজারে ২৫ টাকা, এক লাখের ২.৫ শতাংশ হলো দুই হাজার ৫০০ টাকা। এভাবে সম্পদ যত বেশি হবে জাকাত তত বেশি হবে। কারো কাছে যদি সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দাম, (২০০৮ সালের বাজার মূল্যে অনুসারে ২৪-২৫ হাজার টাকা থাকে তাহলে তাকে ২.৫ শতাংশ হারে জাকাত দিতে হবে।
আট শ্রেণীর ব্যক্তিকে জাকাত দেয়া যায় : জাকাত ব্যয়ের খাত আটটি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয় সাদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৬০)
জাকাত আদায়ে ছলচাতুরী না করা : জাকাত অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মতো একটি আর্থিক ফরজ ইবাদত। এটি আদায়ে কৃপণতা করা যাবে না। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যে সম্পদের সাথে জাকাতের (সম্পদ ও টাকার) সংমিশ্রণ ঘটে তা সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়।’ (বুখারি)
গরিব ও অসহায় ব্যক্তির হক : জাকাত আদায়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন গরিব ও অসহায় ব্যক্তির হক আদায় হয়ে থাকে অন্যদিকে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে গচ্ছিত মালকে পবিত্র করা হয়।
জাকাত হলো ধনীর সম্পদে গরিবের হক। এ হক আদায় না করলে তার কি শাস্তি হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা (সম্পদ) গরম করা হবে, এরপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। আর বলা হবে এটি তাই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৩৫)
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘ধ্বংস মুশরিকদের জন্য, যারা জাকাত প্রদান করে না, আর যারা আখিরাতে অবিশ্বাস করে।’ (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৬-৭)
হাদিসে এসেছে, ‘যে তার সম্পদের জাকাত প্রদান করে, তার সম্পদের অকল্যাণ ও অমঙ্গল দূর হয়ে যায়।’
লেখক : তরুণ প্রবন্ধকার, দক্ষিণ পতেঙ্গা বিজয় নগর, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম