Naya Diganta
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা

তথ্য জানার অধিকার হরণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। গত একমাস ধরে এটি চলছে। গণতান্ত্রিক সমাজে মানুষের তথ্য জানার অধিকার স্বীকৃত। সরকার তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করবে-এটিই কাম্য। বাংলাদেশেও বেশ ঘটা করে তথ্য অধিকার আইন তৈরি করা হয়েছে যদিও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই; বরং ওই আইনের আওতায় তথ্য চেয়ে সাংবাদিককে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। শুধু সাংবাদিকদের অধিকার খর্ব করা নয়, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ সব রকম নাগরিক ও মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এমনই এক অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা বিস্ময়কর নয়।
সাংবাদিকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নিয়ম মেনে ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। কারণ এ ব্যবস্থা খোদ গভর্নরের নির্দেশে নেয়া হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।
গভর্নর কেন এমন একটি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিলেন? গভর্নর বলেছেন, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দরকার। খুব ভালো প্রস্তাব। সাংবাদিক প্রশিক্ষণের জন্য দেশে প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে প্রশিক্ষণের আয়োজন করাই যায়। কিন্তু তার আগে দেখতে হবে, এতদিন যেসব সাংবাদিক বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করেছেন, তারা কি অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বা নীতিবহির্ভূতভাবে খবর ছেপেছেন? তাদের খবরে কি বস্তুনিষ্ঠতার কোনো ঘাটতি ছিল? আমরা জানি, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে আঘাত করে এমন যেকোনো খবরই তাদের কাছে ভিত্তিহীন, বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলক। এসবের মধ্যে তারা নানা দুরভিসন্ধি খুঁজে পান। সে ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের অর্থ হবে- বস্তুনিষ্ঠতার নামে সাংবাদিকদের মগজ ধোলাই যাতে তারা সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও অপকর্মগুলো এড়িয়ে যাওয়ার মতো মন-মানসিকতাসম্পন্ন হতে পারেন। দেশে এখন বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম সরকারি দলের অনুগত লোকদের হাতে। তারা সর্বতোভাবে চেষ্টা করে যাতে সরকারের জন্য ক্ষতিকর কোনো রিপোর্ট প্রকাশ না পায়। এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপ যে দেশের সংবাদমাধ্যমে গত ১৫ বছর ধরেই চলে আসছে সে তো আন্তর্জাতিক বিশ্বও জানে। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংক আর কী বস্তুনিষ্ঠতা শেখাবে?
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রশ্ন রেখেছে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন উদ্যোগ নিয়েছে কি না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন রাখেন, খাদের কিনারায় উপনীত ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই কি এই উদ্যোগ? নাকি এটি ঋণখেলাপি ও জালিয়াতিসহ এ খাতের সঙ্কটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়াস?
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কি এ খাতের অনিয়মের সাথে জড়িত ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মতো অপরাধী মহলের অব্যাহত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে? চক্রটির হাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও নেতৃত্ব যে জিম্মি হয়ে পড়েছে, তা গোপন করতেই কি এমন নিন্দনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
আমরা টিআইবির এই পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগের সাথে একমত। নির্বিচার অনিয়ম, দুর্নীতি, লুণ্ঠন, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি যখন সার্বিকভাবে ধসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে, ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা শূন্যে নেমে এসেছে, তখন তথ্যপ্রবাহ রোধের প্রয়াস অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে সেটিই প্রকট হয়ে উঠেছে।
আমরা অবিলম্বে এ স্বেচ্ছাচারী এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী নির্দেশনা তুলে নেয়ার আহ্বান জানাই।