Naya Diganta

জীবন্ত মানুষকে গণকবর

গাজায় গণকবরে লাশের সন্ধান; ইনসেটে স্বজনদের আহাজারি

- স্থল অভিযানে রাফাহর দিকে এগোচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী
- গণকবরের বিষয়ে জবাব চায় যুক্তরাষ্ট্র
- ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নিরস্ত্রীকরণে রাজি হামাস
- প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার
- ধরপাকড়ের পর আরো উত্তাল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনুসের নাসের হাসপাতাল এবং গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। গণকবর থেকে এখন একের পর এক লাশ বের করা হচ্ছে। যেগুলোর বেশির ভাগই বিকৃত হয়ে গেছে।
যখন এসব গণকবর থেকে বেরিয়ে আসছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লাশ। ঠিক তখনই সামনে এলো লোমহর্ষক ঘটনা। ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মোহাম্মদ মুগির জানিয়েছেন, এসব গণকবরে পাওয়া লাশের অন্তত ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় কবর দেয়ার আলামত পেয়েছেন তারা। তিনি বলেছেন, ‘১০টি লাশের হাত বাঁধা ছিল। অন্যদের শরীরে মেডিক্যাল টিউব সংযুক্ত ছিল। বিষয়টি নির্দেশ করছে তাদের খুব সম্ভবত জীবিত অবস্থায় কবর দেয়া হয়েছে।’ সিভেল ডিফেন্সের এই সদস্য আরো বলেছেন, ‘যে ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি তাদের লাশ ফরেনসিক পরীক্ষা করতে হবে।’
খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালের গণকবর থেকে শিশুদের লাশও উদ্ধার করা হয়েছে। মোহাম্মদ মুগির শিশুদের বিকৃত লাশের ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘গণকবরে কেন শিশুরা? এসব প্রমাণ নির্দেশ করছে ইসরাইলি সেনারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।’

দুই সপ্তাহ আগে খান ইউনুস থেকে সরে যায় দখলদার ইসরাইলের সেনারা। এরপর সেখানে ফিরে যান সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। তারা গিয়ে দেখতে পান খান ইউনুসকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদাররা। তাদের বর্বরতা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতালও। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে হাসপাতালের পাশেই পুঁতে রেখেছে তারা।
খান ইউনুস ও গাজা সিটিতে যখন গণহত্যার আলামত পাওয়া যাচ্ছে ঠিক তখনই গাজার সর্বশেষ নিরাপদ স্থান রাফাতে বর্বরতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালাবেন। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, রাফাতে হামলার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে কবে হামলা চালানো হবে সে তারিখটি স্পষ্ট করেননি তিনি।
স্থল অভিযানে রাফাহর দিকে এগোচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী : জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও অনেক দেশের সতর্কতা উপেক্ষা করে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে এবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর দিকে অগ্রসর হচ্ছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। বুধবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ অভিযানের ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন দেশ। একই সতর্কতা উচ্চারণ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও। তবে সে দিকে কোনো কর্ণপাত করছেন না ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহু সরকারের এক মুখপাত্র জানান, ইসরাইল ‘স্থল অভিযান’ চালানোর জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এই অভিযান কবে, কখন শুরু হয়ে কবে শেষ হবে, তা উল্লেখ করেননি তিনি।
আইডিএফের ওই কর্মকর্তা জানান, হামলা চালানোর আগে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে ও নিরাপদে রাখতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪০ হাজার তাঁবু কিনেছে। এসব তাঁবুর প্রতিটিতে ১০ থেকে ১২ জন থাকতে পারবে। অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, রাফাহ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে খান ইউনুস শহরে বর্গাকার সাদা তাঁবুর সারি। তবে এ ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তবে স্যাটেলাইট কোম্পানি ম্যাক্সার টেকনোলজিস থেকে পাওয়া ছবিগুলো পর্যালোচনা করে রয়টার্স দেখেছে, খান ইউনুসের যে এলাকায় তাঁবুর সারি দেখা গেছে, সেটি কয়েক সপ্তাহ আগেও খালি ছিল। ইসরাইল সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাফাহর বেসামরিকদের স্থানান্তর অনুমোদনের জন্য নেতানিয়াহুর যুদ্ধ মন্ত্রিসভা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করেছে। এক মাসের মধ্যেই স্থানান্তর শুরু হতে পারে।
এ দিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ওয়াশিংটন এখনো রাফাহর বিষয়ে ইসরাইলের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ও ইসরাইলি কর্মকর্তরা শিগগিরই বৈঠকে বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। প্রথমে উত্তর গাজায় নির্বিচারে হামলা চালানো শুরু করে দখলদার ইসরাইল।

জীবন বাঁচাতে উত্তর গাজার বাসিন্দারা দক্ষিণ গাজায় চলে এলে, দক্ষিণ গাজাতেও হামলা চালানো শুরু করে বর্বর ইসরাইল। পুরো গাজা থেকে পালিয়ে মিসরের সীমান্তবর্তী শহর রাফায় অবস্থান নেয় ১০ লাখেরও বেশি অসহায় ফিলিস্তিনি।
গণকবরের বিষয়ে জবাব চায় যুক্তরাষ্ট্র : ইসরাইলের অবরোধে ধ্বংস হওয়া গাজার দু’টি হাসপাতালে গণকবর আবিষ্কারের পর ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জবাব চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবরটি বুধবার রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউজ। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যকর্মীরা খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর হত্যার শিকার এবং গণকবরে প্রায় ৩৪০ জনের লাশের সন্ধান পেয়েছেন। গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের চত্বরেও দু’টি গণকবরে প্রায় ৩০টি লাশ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জবাব চাই। আমরা এটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্ত দেখতে চাই।’ গণকবরগুলো আবিষ্কারের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে পরিস্থিতির স্বাধীন তদন্তে জাতিসঙ্ঘের দাবি জোরালো হচ্ছে। মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক এই হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন, কার্যকর ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে হাসপাতালগুলো বিশেষ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী এবং বেসামরিক নাগরিক, বন্দীদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা একটি যুদ্ধাপরাধ।’
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র বলেছেন, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ বহু লাশ পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু লাশের হাত বাঁধা, যা মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইন লঙ্ঘনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এসব মানুষের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা নিয়ে আরো তদন্ত প্রয়োজন।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নিরস্ত্রীকরণে রাজি হামাস : হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়া গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফিলিস্তিনি সংগঠনটি পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে এবং নিজেদের নিরস্ত্র করতে প্রস্তুত। তবে এ জন্য ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানার মধ্যে একটি ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
আল-হাইয়া গাজায় হামাসের ডেপুটি চেয়ারম্যান। বুধবার আল-আকসা টেলিভিশনকে আল-হাইয়া বলেন, বন্দিমুক্তি চুক্তিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে হামাস। বার্তা সংস্থা এপিকে আল-হাইয়া বলেন, হামাস পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকায় একটি পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী।
তিনি বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সংগঠনগুলোর সব অভিজ্ঞতা বলে- যখন তারা স্বাধীন হয় এবং তাদের অধিকার ও তাদের দেশ পায়, তখন এই শক্তিগুলি কী করে? তারা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয় এবং তাদের প্রতিরক্ষামূলক লড়াকু বাহিনী জাতীয় সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়। এ দিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার সম্প্রতি বেশ কয়েকবার টানেল থেকে বের হয়ে আসেন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের সাথে কথা বলেন।

আল-হাইয়া আরো বলেন, রাফাহ শহরে ইসরাইলের পরিকল্পিত স্থল আক্রমণ হামাসকে ধ্বংস করতে সফল হবে না। ইসরাইলি বাহিনী ‘(হামাসের) ক্ষমতার ২০ শতাংশের বেশি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়নি, না যোদ্ধা বা মাঠে’ যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘তারা যদি হামাসকে ধ্বংস করতে না পারে, তাহলে সমাধান কী? সমাধান হল ঐকমত্যের দিকে যাওয়া।’
প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার : জেরুসালেম পোস্ট জানায়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার তার বাহিনীর সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করতে সুড়ঙ্গ ছেড়ে ওপরে চলে এসেছিলেন বলে খবর পাওয়া গেছে। হামাসের একটি শীর্ষ সূত্র আল-আরাবি আল-জাদিদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্রটি জানায়, সিনওয়ার সম্প্রতি প্রতিরোধ বাহিনী এবং দখলদার সেনাবাহিনীর মধ্যকার সঙ্ঘাতের স্থানগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি সুড়ঙ্গে নয়, বরং মাটির ওপরে হামাস যোদ্ধাদের কয়েকজনের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সূত্রটি দাবি করে, সিনওয়ার ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন নন’।

তিনি বলেন, ‘সুড়ঙ্গের ভেতরে সিনওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন বলে যে দাবি করা হয়, তা আসলে নেতানিয়াহু এবং তার সংস্থাগুলোর প্রপাগান্ডা। তারা মিত্রদের কাছে ঘোষণা করা তাদের লক্ষ্য হাসিলে ব্যর্থতা ঢাকতে এসব কথা বলে থাকেন।’
একই সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে ৪০ জনের বদলে ২০ বন্দীকে মুক্তি দিতে হামাস আগ্রহী বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেটিও অস্বীকার করেন ওই সূত্র। সূত্রটি জানায়, গাজায় আটক বন্দীদের ঠিক কতজন এখনো বেঁচে আছে, তা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে কয়েকটি মিডিয়ায় যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সংখ্যাটি তার চেয়ে অনেক বেশি। সূত্রটি জানায়, হামাসের হাতে প্রায় ৩০ জন ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং শিনবেত অফিসার আটক রয়েছে। এসব বন্দীকে অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে রাখা হয়েছে। তারা আছে দখলদারদের হাত থেকে অনেক দূরে। কোনো পরিস্থিতিতেই তাদের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়।

হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম জানিয়েছে, হামাস নেতা সিনওয়ারের সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে আসার খবরটিকে তারা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলে মনে করছে। উল্লেখ্য, হামাসের অভিযানে আটকদের মুক্তির জন্য এই ফোরাম গঠিত হয়েছে। হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম জানিয়েছে, ‘সিনওয়ারের ছবি দেখা যায় গাজার রাস্তায় রাস্তায়। আর বন্দীরা বেজমেন্টে পড়ে আছে। এটি ইসরাইলি ব্যর্থতার ছবি।
ধরপাকড়ের পর আরো উত্তাল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো : গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব বিক্ষোভ থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে ধরপাকড়ের পর আরো জোরদার হয়েছে ফিলিস্তিনপন্থী এই আন্দোলন। জানা গেছে, আগের আন্দোলনকারীদের সাথে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের আরো দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এগুলো হলো রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহাটন ক্যাম্পাসের মূল চত্বরে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হচ্ছেন। সেখানে তারা সবুজ ভূমির ওপর তাঁবু স্থাপন করে গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

এ অবস্থায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোচে শাফিক নিউ ইয়র্ক পুলিশকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। দাঙ্গা পুলিশ এক শ’রও বেশি শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটককৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্যাম্পাসে প্রচারিত একটি ইমেল বার্তায় শাফিক লিখেছেন, ‘আমি এই বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি, কারণ এখানে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’
এ দিকে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের পর সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ওয়াক আউট করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার প্রথমে জানায়, ক্লাস অনলাইনে নেয়া হবে। পরে বলা হয়, শিক্ষাবর্ষের বাকি সময়টা হাইব্রিড মডেলে ক্লাস হবে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্লাটফর্ম কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপারথাইড ডাইভেস্ট তাদের ইনস্টাগ্রামে প্রতিবাদের বিষয়ে লিখেছে, ‘আমরা চাই, গাজায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ যেন শোনা যায়।’ কলাম্বিয়ার এই প্রতিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের আরো বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ করছেন শিক্ষার্থীরা।