Naya Diganta

চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলার শিরোপা বাঘা শরীফের হাতে

মাথার ওপর প্রকট রোদ। চারদিকে হাজার হাজার দর্শক। বলীখেলার মঞ্চ ঘিরে মুহুর্মুহু হাততালিতে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানাধীন লালদীঘি এলাকায় উৎসবের আমেজ। তখন বেলা চারটা। একে একে ১০৫ জন বলী শারীরিক কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে তুলছিল। হঠাৎ মাইকে ঘোষণা এলো ফাইনাল খেলার দুই কুস্তির কুমিল্লার বাঘা শরীফ ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের রাশেদ বলীর নাম। ফাইনালে বলী ধরে ১১ মিনিটের শ^াসরুদ্ধ লড়াইয়ের পর বাঘা শরীফের কাছে স্বেচ্ছায় হার মানলেন রাশেদ। এর আগে তারা দুজন কানে কানে কী যেন বলেই বাঘা শরীফের শক্তির কাছে সারেন্ডার করেন রাশেদ। তখন ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলার রেফারি বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। তবে মাঠের হাজার হাজার দর্শক এ বিজয় বা খেলাকে মেনে নিতে পারেনি। অনেকে সমঝোতার এ বিজয়কে ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করেন। রাশেদ বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে দারুণ খুশি বাঘা শরীফ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, খুবই ভালো লাগছে। স্বপ্ন ছিল চ্যাম্পিয়ন হব। অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ বলী পাচ্ছেন ট্রফিসহ নগদ ২৫ হাজার টাকা। রানার্স আপ রাশেদ বলী পাচ্ছেন ট্রফিসহ নগদ ১৫ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থান অর্জনকারী খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা। তিনি পেয়েছেন নগদ ছয় হাজার টাকা এবং চতুর্থ স্থান অর্জনকারী পেয়েছেন নগদ পাঁচ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রথম রাউন্ডে জয়ী ৪০ জনকে এক হাজার টাকা করে দেয়া হয়। এর আগে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার ১১৫তম আসর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
এবার চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন, রুবেল, মোমিন, তসলিম, সৃজন চাকমা, তপন চাকমা ও রিংকন বলী খেলেন চ্যালেঞ্জিং রাউন্ডে। তাদের মধ্যে চারজন ‘এ’ গ্রুপে এবং চারজন ‘বি’ গ্রুপে লড়েন। এ ছাড়া নকআউট পর্বে লড়েন আরো ৪০ জন বলী। ধাপে ধাপে সেমিফাইনাল পর্ব পার হয়ে ফাইনাল পর্বে খেলেন বিজয়ীরা। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরের বদরপাতি এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে বলীখেলা প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলেন। ১৩১৬ বাংলা ১২ বৈশাখ (১৯০৯) সালে প্রথম এ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলা ঘিরে কয়েকদিন ধরে উৎসবমুখর মেলার প্রচলন চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়।