Naya Diganta
‘এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%’

আইএমএফের পূর্বাভাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই : অর্থমন্ত্রী

‘এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%’

চলতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে ২০২৫ সালে তা কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ শতাংশে। গত মঙ্গলবার আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের এপ্রিল সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দেয়া হয়। আইএমএফ পঞ্জিকাবর্ষ ধরে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে থাকে।
আইএমএফ বলেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আইএমএফের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার এই পূর্বাভাসে উদ্বেগের কিছু নেই। গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্ত বৈঠকের প্রথম দিনের শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি কমায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো কাজে লাগছে। মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরছে। তবে তিনি মনে করেন, যারা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে, তারা খুশি না। সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশ। উই আর কামিং ব্যাক অন ট্র্যাক। আমাদের করণীয়গুলো কার্যকর করা যাচ্ছে। এগুলো ধীরে ধীরে রেসপন্ড করবে, রাতারাতি নয়।
টার্গেট প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ভালো অবস্থায় আছে। আর এক সাথে তো আর টার্গেট পূরণ হয় না। ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা পুরো অর্থনীতিকে গ্রাস করছে তা দূর করা জরুরি। আর এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা, বাড়বে কর্মসংস্থান।

আইএমএফের পূর্বাভাস ক্রমাগত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, নিম্ন রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং একটি পতনশীল শিল্প বিনিয়োগ লক্ষ্যসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক এবং স্থানীয় চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরেছে। গত বছরের অক্টোবরে, বহুপক্ষীয় ঋণদাতা বাংলাদেশের জন্য ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অনুমান করেছিল, একই বছরের জন্য ৬.৫ শতাংশের পূর্ববর্তী প্রক্ষেপণকে সংশোধন করে।
আইএমএফের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে বার্ষিক গড় ৬.৮ শতাংশের তুলনায়, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ২০২৪ সালে ৫.৯ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৪.৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। আইএমএফ অর্থনীতিবিদ অবশ্য ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়ন, বিশেষ করে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে জ্বালানি মূল্য এবং শিপিং খরচের বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছিলেন।
চলতি অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বছর দুয়েক থেকে মূল্যস্ফীতি ও ডলার সঙ্কটের চাপের মধ্যে বাজেটের সময় নির্ধারণ করা এ লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শুরু থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
আইএমএফ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে থাকবে এমন আভাস দিলেও বাংলাদেশের আরেক উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি চলতি সপ্তাহেই মনে করছে এ হার হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর সপ্তাহ দুয়েক আগে বিশ্ব ব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছিল, যা কোভিড-১৯ মহামারীর আগের দশকে গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৬ শতাংশের নিচে।
আইএমএফের গবেষণা বিভাগের পরিচালক পিয়েরে-অলিভিয়ের গৌরিঞ্চাস প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের সাথে উল্লেখযোগ্য সহনশীলতা প্রদর্শন করে চলেছে, তবে অনেক চ্যালেঞ্জ এখনো সামনে রয়েছে। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.২ শতাংশ এবং ২০২৪ এবং ২০২৫ উভয় ক্ষেত্রেই সেই স্তরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।