ফেনীতে পুলিশের জালে হ্যাকার চক্র

ফেনী শহরের স্টেশন রোডের করিম স্পোর্টসের মালিক করিমুল হক। শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের ব্র্যাক ব্যাংকে রয়েছে তার অ্যাকাউন্ট। গত ১৬ জানুয়ারি রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে একে একে চার ধাপে হাতিয়ে নেয়া হয় ৭ লাখ টাকা। এ ঘটনা শুনে বিস্মিত ব্যাংক কর্তৃপক্ষও। এ ঘটনায় অ্যাকাউন্ট হোল্ডার দোকান মালিক ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। কিছ ুদিনের মধ্যেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর অপর সদস্যদেরও শনাক্ত করা হয়।
মামলার তদন্তকারী সূত্র জানিয়েছে, মামলার ভিত্তিতে বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। গত ৩ ফেব্রুয়ারি হ্যাকার চক্রের সদস্য ইকবালকে (৩৩) গ্রেফতার করা হয়। সে চট্টগ্রামের চানগাঁও থানার চানগাঁও ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকার খাজা রোডের মো: ইসমাইলের ছেলে। গ্রেফতারের পর থেকে একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মুখ খুলেনি ইকবাল। গত বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা জনিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্যও প্রদান করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মামলার তদন্তের স্বার্থে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রকিবুল হাসান রাকিব (৩৪) ও আরিফ উল্লাহ (৪০) নামে আরো দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে আরিফ কক্সবাজার জেলার মহেষখালী থানার মাতার বাড়ী ইউনিয়নের উত্তর শিকদারপাড়া এলাকার জাকারিয়ার ছেলে ও রাকিব একই থানার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মাইজপাড়া ইউনুছখালী এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা রিমান্ড শুনানি গতকাল বৃহস্পতিবার হওয়ার কথা। ওই চক্রের সদস্যদের হোয়াটস্অ্যাপে ‘বেস্ট বয়’ নামে একটি গ্রুপ রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক ছাড়া সিটি ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংকের শত শত ইমেইল রয়েছে ইকবালের কাছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন সিআইডি ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। ইকবালের তথ্য অনুযায়ী ওমর ফারুক নামে আরো একজনকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার এসআই সাইফুল আলম জানান, ‘এ চক্রের চারজনের নাম পেয়েছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছেন। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো একজনকে ধরতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অং প্রু মারমা জানান, ‘ফেনীতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের ঘটনায় এটিই প্রথম মামলা। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ অনুসন্ধানে নেমে পুরো চক্রকে ধরতে পেরেছে।’
এ ব্যাপারে ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, ‘নামের সাথে জন্ম তারিখ মিলিয়ে অ্যাকাউন্ট করা ঠিক নয়। এ কারণে হ্যাকাররা সুযোগ নেয়। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা অ্যাপের মাধ্যমে হ্যাক করা সহজ ছিল। এ চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু হ্যাক করার তথ্য দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

২ সদস্যের রিমান্ড মঞ্জুর
ফেনীতে ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার হ্যাকার চক্রের দুই সদস্যকে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসাদ বেগম এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার এসআই সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, গ্রেফতার আরিফ উল্যাহ ও রকিবুল হাসান রাকিবকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। আদালত শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আরিফ কক্সবাজার জেলার মহেষখালী থানার মাতার বাড়ী ইউনিয়নের উত্তর শিকদারপাড়া এলাকার জাকারিয়ার ছেলে ও রাকিব একই থানার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মাইজপাড়া ইউনুছখালী এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে।