Naya Diganta

পতনে কাবু পুঁজিবাজার দিশেহারা বিনিয়োগকারী

- একদিনে কমলো আরো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা
- দরপতনের শিকার ৮১.০৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার

মূল্যসূচক ও দর পতনের প্রবাহমান ধারাতে কাবু দেশের পুঁিজবাজার। বের হয়ে আসতে পারছে না পতনের গোলকধাঁধা থেকে। প্রতিদিনই সূচকের সাথে হারাচ্ছে বাজারমূলধন। বাজারের এই করুণ দশাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা। নতুন করে একদিনেই বাজারতারল্য বা মূলধন চলে গেছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৭১ পয়েন্টের বেশি। যাদের মধ্যে ১০টি কোম্পানির শেয়ারই ডিএসইর সূচক খেয়ে ফেলেছে ৩৮ পয়েন্টের বেশি। আর সিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১২৪ পয়েন্টের বেশি। দিনের লেনদেন টাকায় ২০.৯৩ শতাংশ এবং শেয়ার বিক্রি ১৮.৬৭ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল বাজারের চেহারার পরিবর্তন আসে লেনদেনে প্রথম ঘণ্টার পরই। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বিশ^াস আর থাকছে না।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শুরুটা ভালোই ছিল। তবে প্রথম দেড় ঘণ্টায় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইতে পাঁচ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩২টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে প্রথম দেড় ঘণ্টায় ১৯৯ কোটি ১৩ লাখ টাকায়। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতনের ধারাতে ছিল। ঢাকা স্টকের ডিএসইএক্স সূচক আরো ৭১.৭০ পয়েন্ট হারিয়ে পাঁচ হাজার ৭৬২.৬৮ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ১৪.৮১ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ২৫২.৩৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১২.৮৫ পয়েন্ট হারিয়ে দুই হাজার ১২.০৭ পয়েন্টে রয়েছে। ষোল কোটি ১০ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৬টি শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ৫৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার টাকায়। সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৪৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার। আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি টাকার বেশি।
ডিএসইতে ৩৯৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে ৩২১টির বা ৮১.০৬ শতাংশে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির। এ শ্রেণীর শেয়ার দর কমেছে ১৭৭টির। এখানে বাজারমূলধন সোমবার থেকে গতকাল আরো চার হাজার ৫০৩ কোটি টাকা চলে গেছে। বর্তমানে বাজারমূলধন ছয় লাখ ৭৯ হাজার ১৯৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় রয়েছে।
আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার ১১৩ টাকায় মোট ২৪ লাক ১৮ হাজার ৮২৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। সোমবার লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ এক হাজার টাকার। ফলে লেনদেন টাকায় বেড়েছে। সিএসইতে ২২৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বেড়েছে ৪০টির, কমেছে ১৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি। যেখানে সোমবার ২২৮টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বেড়েছিল ৩৭টির, কমেছিল ১৫৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৪টির।
ব্লক মার্কেটে ৭৬.১৭ লাখ শেয়ার ট্রেড : আর ডিএসইর ব্লক মার্কেটে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৪টি কোম্পানির ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ২১৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৪৭ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সোনালী পেপার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফাইন ফুডস, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এই ছয় কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানির মধ্যে সোনালী পেপারের দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫০১টি শেয়ার মোট ১৩ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকায়, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের এগারো লাখ ৭৬ হাজার ৩৭৬টি শেয়ার মোট ১০ কোটি ৬২ লাখ ৩২ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। এ ছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংকের পাঁচ কোটি ৯৪ লাখ চার হাজার টাকার, ফাইন ফুডসের তিন কোটি ৪১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দুই কোটি ৬৩ লাখ ৩১ হাজার টাকার এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের দুই কোটি ২১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দশ লাখ শেয়ার হস্তান্তর ঘোষণা : এ দিকে তালিকাভুক্ত এডিএন টেলিকম লিমিটেডের উদ্যোক্তা মামুনুর রশিদ ১০ লাখ শেয়ার হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন বলে ডিএসই তথ্য প্রকাশ করেছে। কোম্পানিটির এই উদ্যোক্তা তার হাতে থাকা ১৩ লাখ পাঁচ হাজার শেয়ারের মধ্যে ১০ লাখ শেয়ার তার পুত্র এবং কন্যার মধ্যে উপহার হিসেবে হস্তান্তর করবেন। ঘোষণা অনুযায়ী, তার ছেলে আহনাফ রাফিদ ছয় লাখ এবং তার মেয়ে আয়েশা আমেনা নুহা চার লাখ শেয়ার গ্রহণ করবেন। শেয়ার গ্রহীতা আয়েশা এবং আহনাফ উভয়ই এডিএন টেলিকমের সাধারণ বিনিয়োগকারী। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ঘোষিত শেয়ার ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেমের বাইরে তারা হস্তান্তর সম্পন্ন করবেন।