Naya Diganta

সাহরির শেষ সময় সম্পর্কে নির্দেশনা

কুরআনে আল্লøাহ তায়ালা বলেছেন- ‘আর পানাহার করতে থাকো যতক্ষণ না রাত্রির কালো রেখার বুক চিরে প্রভাতের সাদা রেখা সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। তখন এসব কাজ ত্যাগ করে রাত পর্যন্ত নিজের রোজা পূর্ণ করো।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৭)
উপরোক্ত আয়াতের ওপর ভিত্তি করে মুহাক্কিকরা সতর্কতার জন্য কয়েক মিনিট আগে সাহরি বন্ধ করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। (রদ্দুল মুখতার, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭১, ফতোয়ায়ে আলমগিরি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৯৪)
এ ছাড়া সুবহে সাদিক হওয়া এবং সাহরির সময় বাকি থাকার ব্যাপারে সংশয়যুক্ত সময়ে পানাহার করা মাকরুহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন অনেকে।
তবে এই সময়ে খাওয়ার মাধ্যমে রোজা সহিহ হয়ে যাবে বলেছেন। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৩২, আল-ফিকহুল হানাফি ফি সাওবিহিল জাদিদ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৩৩)
সাহরির সময় সম্পর্কে হাদিসে পাওয়া যায়- এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস রা:-কে বলল, ‘আমি সাহরি খেতে থাকি। অতঃপর যখন (ফজর হওয়ার) সন্দেহ হয়, তখন বন্ধ করি।’ তিনি বললেন, ‘যতক্ষণ সন্দেহ থাকে ততক্ষণ খেতে থাকো, সন্দেহ দূর হয়ে গেলে খাওয়া বন্ধ করো। (ইবনে আবি শাইবা, মুসান্নাফ : ৯০৫৭, ৯০৬৭)
ইমাম আহমাদ রহ: বলেন, ‘ফজর উদয় হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত না নিশ্চিত হওয়া গেছে ততক্ষণ রোজাদার পানাহার করতে পারবে।’ (ফিকহুস সুন্নাহ-১/৪০৪)
এ ছাড়া হানাফি মাজহাবের প্রখ্যাত ফকিহ আবু বাকার আল জাসশাস রহ: বলেন, ‘মহান আল্লøাহ রোজার রাতগুলোতে স্ত্রী সহবাস ও পানাহারকে বৈধ করেছেন রাতের শুরু থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। এর পরে রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (আহকামুল কুরআন-১/২৬৫)
তবে সাহরির শেষ সময়ের জন্য আজান শর্ত নয়। রাসূল সা:-এর সময়ে হজরত বিলাল রা:-এর আজান শুনলে সাহরি বন্ধ না করার নির্দেশনা ছিল যতক্ষণ না উম্মে মাখতুমের আজান শুনবে না ততক্ষণ। হাদিসে এসেছে- ‘বিলাল রাতে আজান দেয়। অতএব তোমরা পানাহার করো উম্মে মাকতুম আজান দেয়া পর্যন্ত। আর তিনি ফজর উদিত না হলে আজান দেন না।’ (বুখারি-১৯১৯, মুসলিম-১০৯২) ব্যাপার হলো, উম্মে মাখতুম রা: অন্ধ ছিলেন। তাকে যখনই বলা হতো ‘ভোর হয়েছে’ তখনই আজান দিতেন। (বুখারি-৬১৭)
সুতরাং, সাহরির শেষ সময় নির্ধারণের জন্য সতর্কতাবশত নির্দিষ্ট সময়েরও কয়েক মিনিট আগে সাহরি শেষ করা বাধ্যতামূলক নয়; বরং ভোরের শুভ্ররেখা পরিস্ফুটন হওয়া পর্যন্ত সাহরি করা যাবে। আর সাহরির সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আজান দেয়া সমীচীন।
লেখক : শিক্ষক