Naya Diganta

মুখের যত্নে

মুখ শরীরের আয়না হিসেবে কাজ করে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করতে হবে, সার্বিক স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান ঠিক রাখার জন্য। আপনার মুখ ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখলে মাড়ির রোগ থেকে সৃষ্টি হওয়া পেরিওডন্টাল রোগ, ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস, ব্রেন স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, স্বাস্থ্যবান মুখ আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। রোগ না থাকলে আর্থিক ব্যয় হয় না বলে জীবনের মানও সুন্দর হয়। মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত। তাই মাড়ি এবং মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখলে আমরা এ ধরনের ক্যান্সার এবং নানাবিধ আলসার থেকে রক্ষা পেতে পারি। মুখের রোগ পেরিওডন্টাইটিসের সাথে নন-এলকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় অথবা এসব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। গর্ভকালীন সময়ে মুখের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। গর্ভবতী থাকার সময় মাড়ি রোগ থাকলে গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, ওই শিশু আকার এবং আকৃতিতে ছোট হবে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারে অরুচি থাকে। পেট ফাঁপা থাকতে পারে অথবা পেট ভরা ভরা লাগতে পারে। এ জন্য একবারে বেশি না খেয়ে বারবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। একজন মানুষ সাধারণত দিনে তিনবার খাবার গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে তিনবারের পরিবর্তে পাঁচবার অল্প অল্প করে খাবার দেয়া উচিত। কারণ বমি বমি ভাবের কারণে এবং খাবারে অরুচির কারণে অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের কেউ কেউ সামান্য খাবার খান বা একদম খেতে চান না। এ সময় দাঁত ও মুখের যত্ন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য ফলিক এসিডের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম তিন মাসে অবশ্যই ফলিক এসিড দেয়া প্রয়োজন। সবার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ফলিক এসিডের অভাব হলে ঠোঁট কাটা এবং তালু কাঁটা শিশুর জন্ম হতে পারে। এ ছাড়া ফলিক এসিডের অভাব হলে শিশুর গঠন এবং গর্ভবতী মায়ের মুখে আলসার দেখা দিতে পারে। খাবারের পাশাপাশি ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় প্রোজস্টেরন হরমোন বেশি থাকার কারণে গর্ভবতী মায়েদের কনস্টিপেশন এবং মুখের রোগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া মাড়িতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী থাকার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দাঁতের স্কেলিং করে মাড়ির যথাযথ যতœ নিলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে মুখের ভালো স্বাস্থ্য আমাদের সুখ এবং মঙ্গলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের পেরিওডন্টাল রোগ আছে তারা এথেরোস্কেলেরোটিক হার্টের রোগের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এথেরোস্কেলেরোসিস এমন একটি অবস্থা যখন শরীরের ধমনি আক্রান্ত হয়ে ধমনির অভ্যন্তরভাগ সরু হয়ে যায়। কারণ ধমনির প্রাচীরে প্ল্যাক জমা হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত পরিবহন কমে যায়। যদি হৃদযন্ত্রগামী ধমনি বা রক্তনালীতে কোনো প্রতিবন্ধকতা হয় তবে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা মাঝে মাঝে বাম হাতে, কাঁধে বা চোয়ালে অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো নিচের চোয়ালের মাড়ির দাঁতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এথোরোস্কেলেরোসিস মস্তিষ্কের ধমনিতে হতে পারে। ফলে মাথা ব্যথা, অস্বচ্ছ দৃষ্টি এবং মাথা ঘুরতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এথেরোস্কেলেরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ছাড়া ধূমপান, মোটা হয়ে যাওয়া, স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া ঝুঁকির কারণসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু পেরিওডন্টাল রোগের সাথে এথেরোস্কেলেরোসিসের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, তাই আপনার মাড়ির যতœ নিতে হবে। ভুলে যাওয়া রোগের সাথে মাড়ি রোগের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু দাঁতের যত্ন নিলেই হবে না পাশাপাশি মাড়ি ও শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। আর অবশ্যই মনে রাখবেন পেরিওডন্টাল রোগ হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। পরিবারের একজনের পেরিওডন্টাল রোগ হলে পরিবারের বাকি সদস্যদের চেকআপ করিয়ে নিতে হবে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রেখে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য কখনোই ভালো রাখা সম্ভব নয়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে আপনি বিভিন্ন ধরনের সিস্টেমিক রোগ থেকে শুরু করে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যার কারণে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই আপনার দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন লাভের জন্য মুখের যতœ নিন। মুখ আপনার যত্ন নিবে। আজীবন হাসির জন্য মুখের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। আপনার মুখ ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।
লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ, ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার, বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭