Naya Diganta

রেকর্ড রানে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ২০১০ সালে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই ব্যবধানটা ৪৬৫ রানের। আর গতকাল যখন লঙ্কানদের ৫১১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩৭ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখন সেই রেকর্ডটিকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। আরেকটি লজ্জার রেকর্ডের সামনে থেকে ৫ উইকেট খরচ করে ৪৭ রানে, তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্টে ৬২ রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা এখন দূর করা গেলেই হয়।
বাংলাদেশ মূলত ম্যাচটা হেরে বসে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দুর মেন্ডিসের দ্বিতীয় ইনিংসে করা ১৭৩ রানের জুটির পরপরই। এরপর সেটা যখন ৫১১-তে গিয়ে ঠেকে। তখন জয়ের স্বপ্নটা দিবাস্বপ্নে পরিণত হয় বাংলাদেশের জন্য। কেননা, এত রান টপকে জয়ের রেকর্ড যে নেই কোনো দলের। তাই সেই দিক থেকে চিন্তা করলে সিলেট টেস্টে দেড়দিন হাতে রেখেই বাংলাদেশের হার এক প্রকার নিশ্চিত।
অথচ বাংলাদেশের থেকে কাম্য ছিল একটা ভালো লড়াই। সেই আশা সমর্থকরা করেছিল সম্প্রতি এই দুই দলের মধ্যে চলমান দ্বৈরথের কারণেই। তবে এদিন তার উত্তাপ টের পাওয়া গেল না। লঙ্কান বোলারদের সামনে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়ল টাইগার ব্যাটাররা। লঙ্কান পেসারদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই পারল না কোনো ব্যাটার। শূন্য রানে উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু।
এমন একটা শুরুর পর বাংলাদেশের ইনিংস কতদূর যাবে তা অনুমেয়ই ছিল। সেই অনুমান আরো স্পষ্ট হতে থাকে দলীয় ৩৭ রানে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটার ফিরলে। বিশ্ব ফার্নান্দোর বল যেন না খেলতে পারলে বেঁচে যায় বাংলাদেশী ব্যাটাররা। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ওভারের লিমিটেশন না থাকায় তাকে খুব বেশি ওভার এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই উইকেট বিলি করে আসাকেই শ্রেয় মনে করেছে বাংলাদেশী ব্যাটাররা। লিটন দাস আরো একবার ফিরেছেন শূন্য রানে। ফার্নান্দোর ইনসুইংয়ে পরাস্ত হয়ে উইকেট দিয়ে এসেছে তিন ব্যাটার।
পরে শেষ বিকেলে উইকেটে এসে দিনটা কোনো রকমে পার করে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। মুমিনুল হককে নিয়ে শেষ বিকেলে উইকেটে আরো কোনো আঘাত আসতে দেননি তিনি। বাংলাদেশ দিনের খেলা শেষ করেছে ৫ উইকেট খরচ করে স্কোরবোর্ডে ৪৭ রান করে। চতুর্থ দিনে ৭ রানে মুমিনুল ও ৬ রানে তাইজুল ব্যাট করতে নামবেন। প্রথম ইনিংসেও সম্মানটা রেখেছেন তাইজুল। স্বীকৃত ব্যাটার ব্যার্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর বোলার তাইজুলই বনে যান ব্যাটার। সর্বোচ্চ রানটিও ছিল তার।
সিরিজের প্রথম টেস্ট জিততে বাংলাদেশকে ৫১১ রানের টার্গেট দিয়েছে সফরকারী শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে ৯২ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৮ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা। অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১০৮ ও কামিন্দু মেন্ডিস ১৬৪ রান করেন। প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তারা দু’জন।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ১১৯ রান। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ২১১ রানে এগিয়েছিলো তারা। অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ২৩ ও বিশ^ ফার্নান্দো ২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আগের দিন পাঁচ উইকেটে ১১৯ রান করা শ্রীলঙ্কা তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে চাপে রাখে। শুরুতে ফার্নান্দোকে ফেরালেও প্রথম সেশনে আর উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগের ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিস দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। তাদের ব্যাটে ভর করেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে শ্রীলঙ্কা। লিডসহ শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৫১০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা (প্রথম ইনিংস) : ২৮০/১০ (৬৮ ওভার) (ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১০২, কামিন্দু মেন্ডিস ১০২, খালেদ ৩/৭২, নাহিদ রানা ৩/৮৭)।
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) : ১৮৮/১০ (৫১.৩ ওভার) (তাইজুল ৪৭, লিটন ২৫, শাহাদাত দিপু ১৮, খালেদ ২২, শরিফুল ১৫, লাহিরু ৩/৩১, ফার্নান্দো ৪/৪৮, রাজিথা ৩/৫৬)।
শ্রীলঙ্কা (২য় ইনিংস) : ৪১৮/১০ (করুনারতেœ ৫২, ধনঞ্জয়া ১০৮, কামিন্দু ১৬৪, মিরাজ ৪/৭৪, তাইজুল ২/৭৫)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ১৩ ওভারে ৪৭/৫ (জয় ০, জাকির ১৯, নাজমুল ৬, শাহাদাত ০, লিটন দাস ০, মুমিনুল ৭*, তাইজুল ৬*, বিশ^ ফার্নান্দো ৩/১৩, রাজিথা ১/১৯, কুমারা ১/৬)।