Naya Diganta

জামালপুরে মাঠে মাঠে সবুজ ধান, বোরো চাষ প্রায় দেড় লাখ হেক্টর

রবি শস্য সরিষা, বেগুন, আলুসহ বিভিন্ন ফসল উঠার পর জামালপুরের মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজ ধানের ক্ষেত। যে সবুজ মাঠের দিকে তাকালে চোখের বাড়ে জুঁতি আর কৃষকের ভরে উঠে মন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলার সাত উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে এক লাখ ২৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে রূপসী, হাইব্রিড কালো বোরোসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে। এসব ধানের মধ্যে হাইব্রিড ৫০ হাজার ৮০০ হেক্টর, উপশী ৭৮ হাজার ২৩০ এবং স্থানীয় জাতের ২৩০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, জেলার সদর উপজেলায় ৩৪ হাজার ৮২৫ হেক্টর, সরিষাবাড়িতে ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টর, মেলান্দহে ২৯ হাজার ২৮৫ হেক্টর, ইসলামপুরে ১৭ হাজার ১১০ হেক্টর, দেওয়ানগঞ্জ আট হাজার ৬৪০ হেক্টর, মাদারগঞ্জে ১৬ হাজার ৩২৫ হেক্টর এবং বকশিগঞ্জে ১৩ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাইব্রিড প্রতি হেক্টর ৪.৯৮ টন, উফশী ৩.৯৯ টন এবং স্থানীয় জাত ১.৯৬ টন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজে ছেয়ে গেছে জামালপুরে দিগন্ত জোড়া সবুজ ধানের ক্ষেত। পরিচর্যা, সার-কীটনাশক প্রয়োগ এবং সেচ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। দিগন্ত জোড়া ইরি-বোরো ধানের সবুজ মাঠের দিকে তাকালেই যেন ভরে উঠে দুই নয়ন।

এ সময় কথা হয় জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের সাজিমারা গ্রামের কৃষক শরেশ মিয়ার সাথে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সব জমি তিন ফসলি। ধান কাইটি পাট বুনছি। পাট কাইটি মরিচ বুনছি। এহন মরিচ পাকছে। মরি তুইলি এহন ধান নাগাইছি। তবে সার তেল ও কারেনের (বিদ্যুৎ) দাম বেশি। ধান আবাদ কইরি পুষে না।’

ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালের চর ইউনিয়নের বোলাকীপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমাগরে জমিতে চাষাবাদ হয়। মরিচ তুইলি ধান নাগাইছি। ঘন ঘন বিদ্যুতে লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষতে সেচ দিতে সমস্যা কথা জানান তিনি।’

মেলান্দহ উপজেলার জাফরশাহী পচাবহলা গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, ‘আমাদের জমি দু’ফসলা তাই মেল্লা (অনেক) আগেই ধান নাগাইছি। আমাগো ধান ক্ষেত কালা (সবুজ) ও গুছি মুটা হয়ে উঠছে।’

তিনি আরো জানান, ‘সার, তেল ও বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় ধান চাষে লোকসান গুনতে হয় তাদের।’

ইসলামপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক জুনু বেপারী বলেন, ‘আমার ধান মোটামুটি হয়েই গেছে। আমাদের জমিতে শুধু ইরি-বোরো ধানই হয়। তাই আগেই নাগাইছি (মৌসুম শুরু) রোপণ করা হয়েছে।’

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মার্চ মাসের এই কয়েক দিনের মধ্যেই এক লাখ ২৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে।’

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘দেশেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন করতে সরকার যে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। জেলা কৃষি বিভাগ তা শত ভাগ বাস্তবায়নের নিরলস কাজ করে চলেছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ইতোমধ্যে তা পূর্ণ হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি ধান উৎপাদনের আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।