Naya Diganta
খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশ

ক্ষুধা নিবৃত্তির উন্নয়ন চাই

খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশ

দেশ খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। এটি এখন আর বিরোধীদের প্রচার নয়, রূঢ় বাস্তবতা। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে এ সত্য উঠে এসেছে। সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর দেশের প্রায় পৌনে চার কোটি মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হন।
২০২৩ সালের জুন মাসে দেশের প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের মধ্যে জরিপ চালায় পরিসংখ্যান ব্যুরো। ব্যুরোর ‘খাদ্যনিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩’ শিরোনামের ওই জরিপ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, খাবারপ্রাপ্তিতে ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রায় চার কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাঝুঁকির মুখে পড়েন। ভাষার আড়ালে সত্য বুঝতে সমস্যা হয় অনেকের। তাই স্পষ্ট করা দরকার। ১৫ লাখ মানুষ খাবারের কোনো সংস্থান করতে পারেননি। তাদের না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে।
একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক মানুষকে দিনে খাবারের পরিমাণ কমাতে হয়েছে এবং এতে করে দেশে নিঃসন্দেহে অপুষ্টি বাড়বে।
জরিপে অংশ নেয়া মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাদের কি এমন দিন গেছে যেদিন না খেয়ে পার করতে হয়েছে; এমন দিন কি গেছে যেদিন এক বা দুই বেলার খাওয়া জোটেনি; যতটুকু খাওয়া দরকার তার চেয়ে কম খেয়েছেন; স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেয়েছে কয়দিন অথবা তারা যথেষ্ট পরিমাণ খাবার পাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন কিনা। এসব প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, গরিব পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মাঝারি অথবা গুরুতর খাদ্যসঙ্কটের মধ্যে আছে। খাবার জোটাতে না পারার কারণে এক বেলা না খেয়ে থেকেছেন প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ মানুষ।
জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত রয়ে যাওয়া খাদ্যমূল্যের অনিয়মিত প্রকৃতিই এ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির কারণ। এটি ঠিক যে, গত একযুগের মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চদের কাতারে। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও বাংলাদেশ পারেনি। আমাদের বিবেচনায় এর কারণ, অর্থনীতিতে শৃঙ্খলার অভাব তথা নৈরাজ্য। এর আগে সরকারি কোনো সংস্থা দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেনি। মানুষ গরিব থেকে আরো গরিব হচ্ছেন, যারা গরিব ছিলেন না তারাও গরিবের কাতারে চলে যাচ্ছেন এমন তথ্য আমরা সরকারি সংস্থার মাধ্যমে কম পেয়েছি।
এমন প্রেক্ষাপটে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের তথ্য খুব উদ্বেগের। দেশ যখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, রাজধানীর কিছু মানুষ ঝকঝকে মেট্রোরেলে চড়ে ইউরোপ-আমেরিকা হওয়ার স্বপ্নে ভাসছেন, ঠিক সে সময় সারা দেশে প্রায় চার কোটি মানুষ পরের বেলা কী খাবেন বা আদৌ খেতে পাবেন কিনা সে চিন্তায় ঘুমাতে পারছেন না। বোধগম্য যে, মানুষ স্বর্গসুখে আছেন এমন দাবি যিনি করে থাকেন, সেটি সত্য নয়। অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন মানুষের ক্ষুধা দূর করেনি; বরং বাড়িয়েছে। এটি অসুস্থতার লক্ষণ। মেট্রোরেলের উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন চাই ক্ষুধা নিবৃত্তির।