Naya Diganta

তবুও রাফায় হামলা চালাবেন নেতানিয়াহু

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যান করে গাজা-মিসরীয় সীমান্তের কাছে রাফাতে আক্রমণ চালানোর প্রতিজ্ঞা করেছেন। কাতারে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।

নেতানিয়াহু তার অফিস থেকে প্রকাশিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের একটি ভিডিওতে বলেন, 'কোনো ধরণের আন্তর্জাতিক চাপই আমাদের যুদ্ধের সকল লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে, গাজায় হামাসের সকল ধরণের নিয়ন্ত্রণ মুছে ফেলা থেকে আটকাতে পারবে না। এর জন্য, আমরা রাফাতেও কাজ করব।' তবে তিনি আসন্ন আক্রমণের কোনো ইঙ্গিত দেননি।

পরে তিনি সিএনএন-এর 'স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' অনুষ্ঠানে বলেন, ইসরাইল হামাসের সাথে যুদ্ধে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে একমত হওয়ার জন্য 'চেষ্টা চালিয়ে যাবে'। গাজা যুদ্ধ এখন ষষ্ঠ মাসে গড়িয়েছে। তিনি বলেন, তবে এটি অর্জনের জন্য, 'আমরা সামরিক চাপ বজায় রাখবো।'

নেতানিয়াহু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার, যিনি সর্বোচ্চ পদমর্যাদার ইহুদি-আমেরিকান কর্মকর্তা, গত সপ্তাহে ইসরাইলে নতুন নির্বাচনের জন্য যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা 'সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত।'

উল্লেখ্য, শুমার দাবি করেন, গাজায় বোমা হামলা করার মাধ্যমে নেতানিয়াহু 'তার পথ হারিয়েছেন'।

ইহুদি রাষ্ট্রটির দীর্ঘদিনের মিত্র শুমার বলেন, নেতানিয়াহু তার দেশকে বিশ্বে একটি ‘একঘরে রাষ্ট্রে’ পরিণত করার ঝুঁকিতে আছেন। ইসরাইল কয়েক মাস ধরে গাজায় জটিল নিরাপত্তা চেক পয়েন্ট স্থাপনের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা বহনকারী ট্রাকগুলোর প্রবেশ সীমিত করেছে, যার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ক্ষুধার্ত এবং অনেকে অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে।

নেতানিয়াহু সিএনএনকে বলেন, চলমান যুদ্ধের জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করা 'নিষ্ঠুর এবং সম্পূর্ণ অন্যায়'।

অক্টোবরে হামাস ইসরাইলের উপর সন্ত্রাসী হামলা করলে সংঘাতটি শুরু হয়। এ হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল এবং হামাস প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে যায়।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, ইসরাইলের চলমান পাল্টা আক্রমণে ৩১,৬০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু। গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভূখণ্ডটির বেশিরভাগ অবকাঠামো এবং বাড়িঘর মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।

ইসরাইলে পরিকল্পিত সফরের আগে, জর্ডানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলটজ বলেন, রাফা আক্রমণ আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠাকে 'খুব কঠিন' করে তুলবে এবং এখন প্রচেষ্টা হলো যে 'আমরা একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পারি।'

নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল রাফায় কোনো স্থল অভিযানের আগে সেখান থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। তবে তারা কোথায় যাবে তার কোনো পরিকল্পনা তৈরি করেনি।

হামাস গত সপ্তাহে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির জন্য প্রায় ৪০ জন ইসরাইলি বন্দী বিনিময় সহ একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পেশ করেছে। ইসরাইলের প্রতিনিধিদল চলে যাওয়ার আগে তাদের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে আলোচনা করতে বৈঠক করবে।

নেতানিয়াহু ইতিমধ্যেই বলেছেন যে প্রস্তাবটি হামাসের 'অবাস্তব দাবির' ওপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে। তবে, মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সাথে পরিচিত একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেন যে হামাস প্রস্তাবিত বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে বিশদ বিবরণ দেয়ায় একটি চুক্তির সম্ভাবনার ভালো আশা রয়েছে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা