Naya Diganta

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুগদা শাখার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সিদ্দিকী। কয়েক দিন হলো তার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি। পরিবারের সবার ধারণা, সাধারণ জ্বর। কিন্তু সিদ্দিকীর জ্বর কোনোভাবেই কমছে না। বরং দিন-দিন অসুস্থ হতে থাকে সে।

পাঁচ দিন পর সিদ্দিকীর বাবা ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করে দেখেন, সিদ্দিকী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এরপর সিদ্দিকীকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য। বর্তমানে সিদ্দিকী সুস্থ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকদের মতে, এবারেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে হবে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৩৯৪ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১৭ জন। গতবছরের প্রথম দু’মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। মারা গিয়েছিলেন নয়জন। গত বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মারা যায় এক হাজার ৭০৫ জন।

গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে প্রথম ২০০০ সালে ব্যাপক হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। এরপর ২২ বছর পর্যন্ত যত মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে, গত এক বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে।

আমাদের দেশে ডেঙ্গুর ধরন চারটি। ডেন-১, ২, ৩, ৪। গতবছর দেশে ডেন-২ আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল।

চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার বা নতুন কোনো ধরনে আক্রান্ত হলে সেই রোগীর পরিস্থিতি গুরুতর হয়। ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু বেশি ছড়ালে নাজুক পরিস্থিতি হতে পারে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে রোগী বেশি হলে তা সামলানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। ঢাকার বাইরে মশা নিধনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আরো সবল করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ১৫ জেলায় লার্ভা জরিপ করে। জরিপে প্রত্যন্ত গ্রামেও এডিস মশা ছড়িয়ে পড়েছে বলে দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা থাকার জন্য আমাদের কিছু বিষয় জানা অত্যান্ত জরুরি। যেমন-

ডেঙ্গু কি?
ডেঙ্গু রোগটি ভাইরাসজনিত। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ জ্বর। ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেয়ার পর আবারো আসতে পারে। এর সাথে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কী করা প্রয়োজন?
ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে- নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের চারটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে। প্রথম ক্যাটাগরির রোগী স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেয়াই যথেষ্ট। ধরন বা ক্যাটাগরি-৩ এর ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকে। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার কি?
ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ পানি, স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস, এবং দুধ জাতীয় তরল পানীয় পান করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে ওঠার পরেও প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। এ সময় শরীর যেন পানিশূণ্যতায় না ভোগে সে জন্য প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।

ডেঙ্গুতে কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন?
ডেঙ্গুতে সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকে এক বছরের কম এবং ৬৫ বছরের ওপরে যাদের বয়স। এছাড়া গর্ভবতী নারী যাদের ওজন বেশি, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা আছে, যারা হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত, কিংবা যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। তাদেরকে ডেঙ্গু সংক্রামণের শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এডিস মশা এবং ডেঙ্গু রোগীর ওপর নজরদারী বাড়াতে হবে। এডিস মশার লার্ভা জন্মে এমন জায়গাগুলো অপসারণ করতে হবে। জনগণকে ডেঙ্গু নিধনে সম্পৃক্ত করতে হবে। গতবছর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। সেখানে বেশিভাগ রোগী প্রথমবারের মতো আক্রান্ত হয়েছে। এবার যদি ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে তারা দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হতে পারে। আবার নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’।
সূত্র : বাসস