Naya Diganta

দ্রব্যমূল্য, গুজব আর মাদকসহ আরো যা যা উঠে এলো ডিসি সম্মেলনে

সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আর জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিসিদের ক্ষমতা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলোতে জোর দিয়ে বাংলাদেশে চার দিনের জেলা প্রশাসক বা ডিসি সম্মেলন শেষ হয়েছে বুধবার।

এই সম্মেলনে সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে দেশের প্রশাসনে মাঠ পর্যায়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে ডিসিদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার ওপর জোর দিয়েছে সরকার।

পাশাপাশি কোনো ভুলে যাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না হয়, সে দিকেও ডিসিদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের মন্ত্রীরা।

তবে জেলা প্রশাসকরা সরকারকে জানিয়েছেন বাজারে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে উদ্বেগ আছে, তাছাড়াও জেলা পর্যায়ে মাদকের বিস্তার আর সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো যেভাবে বাড়ছে তাতেও তারা উদ্বিগ্ন।

বুধবার সম্মেলনের শেষ দিনে ডিসিদের সাথে বৈঠকের পর এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন ডিসি সম্মেলনে আলোচনার জন্য মোট ২৫৬টা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন জেলা প্রশাসকরা।

বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি বিরোধী দল বিএনপি-কে ছাড়াই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর এটাই ছিল প্রথম ডিসি সম্মেলন।

এই সম্মেলনটি সরকারের প্রশাসন যন্ত্রের মাঠপর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বার্ষিক ও রুটিন সম্মেলন হিসেবেই অবশ্য বিবেচিত হয়।

এই সম্মেলনে মূলত সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন জেলা প্রশাসকরা।

এজন্য সম্মেলনের আগেই নিজ জেলার বিভিন্ন সংকট বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তাব পাঠান মাঠ প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এবারের সম্মেলনের আগে ডিসিদের দিক থেকে আলোচনার জন্য মোট প্রস্তাব এসেছিল ৩৫৬টি। গত রোববার সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, সম্মেলনে ডিসিদের তরফ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, বিশেষ করে আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিভিন্ন সঙ্কটে করণীয় সম্পর্কে জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে ডিসিদের মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যে প্রশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে, এমন কিছু যেন না হয়।

দ্রব্যমূল্য, গুজব ও সরকারের ভাবমূর্তি
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে দেশের উত্তর ও দক্ষিণের দুটি জেলার দুই ডিসি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন সম্মেলনে সরকারের দিক থেকে নির্দেশনা আসার পাশাপাশি ডিসিরা যে সব সঙ্কট তুলে ধরেছেন সেগুলোর সমাধানে করণীয় সম্পর্কে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে।

‘শুরুর দিনেই রমজান মাসে কেউ যাতে অন্যায়ভাবে পণ্য মজুত করে সংকট তৈরি না করতে পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।’

এক জেলা প্রশাসক বলেছেন, ’তাছাড়া প্রতি মাসে ডিসিদের সভা করে সংকটগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে বলা হয়েছে। ডিসি পর্যায়ে যেগুলো সমাধান করা যাবে না সেগুলো দ্রুত সরকারকে জানাতে বলা হয়েছে।

আবার সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জেলা প্রশাসকদের কাজেকর্মে সতর্ক থাকার পরামর্শও এসেছে মন্ত্রীদের দিক।

মঙ্গলবার ডিসিদের সাথে বৈঠক শেষে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ছোট্ট কোনও ভুলে যাতে পুরো ক্যাডার সার্ভিস বা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়, সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক করা হয়েছে।’

তার সঙ্গে ডিসিদের বৈঠকে তেরোটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে হোসেন বলেছিলেন, ‘যেসব বিষয়ে জনঅসন্তোষ রয়েছে, সেগুলোতে মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং সেবা যথাযথ দিতে হবে।’

’শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে পরিদর্শন আরও বাড়াতে বলা হয়েছে। কারণ, অবকাঠামো উন্নয়নের পর আমাদের এবারের লক্ষ্য মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো”, জানান মি হোসেন।

বৈঠক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন মঙ্গলবার মোট বারোটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক অধিবেশন ছিল জেলা প্রশাসকদের। কিন্তু ঘুরে ফিরেই উঠে এসেছিলো দ্রব্যমূল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় প্রসঙ্গ।

‘কেউ বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে চুয়াত্তর সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে’, বলছিলেন একজন জেলা প্রশাসক।

অন্যদিকে ডিসিদের সাথে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন যে করোনার সময়ের মতো ভার্চুয়াল আদালত চালু করা যায় কি না, তা চিন্তা করার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসকরা।

‘আর আমাদের দিক থেকে যেসব মাদক পরিবহন সহজ, সেগুলো নিয়ে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে,” বলছিলেন তিনি।

ডিসিদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান যে জরুরি দরকারের সময়ে সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহারের সুযোগ এবং সীমান্তে প্রতিবেশী দেশ থেকে এসে ইলিশ মাছ ধরে নেওয়া ঠেকানো-সহ বেশ কিছু প্রস্তাব তারা পেয়েছেন ডিসিদের কাছ থেকে।

তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিসিদের সাথে তার বৈঠক শেষে জানিয়েছেন গুজব প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের চারটি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এগুলো হলো ডিজিটাল ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা।

আর তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ডিসিদের সাথে বৈঠকের পর বলেছেন গুজব ছড়ানোর জন্য দায়ী অনলাইন পোর্টালগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার বিষয়ে ডিসিদের সাথে তার আলোচনা হয়েছে।

‘গোটা দেশের গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা দরকার। সাংবাদিকদের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও গণমাধ্যমকর্মী আইন দ্রুত করে ফেলা দরকার।’

’জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকেও একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে”, মঙ্গলবার ডিসিদের সাথে তার বৈঠকের পর বলেছিলেন তিনি।

অন্যদিকে সম্মেলনের শেষ দিকে আজ বুধবার ডিসিদের সাথে বৈঠক শেষে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন দেশজুড়ে এডিস মশা প্রতিরোধে সচেতনতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি