Naya Diganta

রামসে হান্ট সিন্ড্রোম

বিরল বলা হলেও রামসে হান্ট সিন্ড্রোম রোগটি কিন্তু এতটা মারাত্মক না। আমরা যারা নিউরোলজিস্ট তাদের কাছে রোগটি খুব বিরল না।

কেন হয়?
চিকেনপক্স বা জলবসন্ত বেশ কমন একটি রোগ। ছোটবেলায় আমাদের মোটামুটি সবার হয়েছে। এটি ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। চিকেনপক্সের জন্য দায়ী ভাইরাসটির নাম হলো ভেরিসেলা জোস্টার। এ ভাইরাসটি একবার সংক্রমণের পর শরীরে সুপ্তাবস্থায় থাকে। বিভিন্ন কারণে এটি তার সুপ্তাবস্থা থেকে আবার সক্রিয় হতে পারে। এ ভাইরাসটি যখন সক্রিয় হয় তখন এটি স্নায়ু বা নার্ভকে আক্রমণ করে। এ ভাইরাসটি মুখের নার্ভ যাকে ফেসিয়াল নার্ভ বলে তাকে আক্রমণ করে। এ কারণে ফেসিয়াল নার্ভে প্রদাহ দেখা দেয়, ফুলে যায়। কার্যত নার্ভটি অকেজো হয়ে পড়ে। তাই বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়।

লক্ষণগুলো
রামসে হান্টে দুই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। ফেসিয়াল নার্ভ অকেজো হওয়ার জন্য কিছু লক্ষণ এবং কানের মধ্যে, মুখে, গলার ভেতরে চিকেনপক্সের মতো ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

ফেসিয়াল নার্ভের জন্য লক্ষণগুলো হলো
- মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া
- চোখ বন্ধ করতে না পারা
- কপাল কুঁচকাতে না পারা
- গাল ফুলাতে না পারা
- হাসিতে মুখ একদিকে চলে যাওয়া
- খাবার খেলে মুখে খাবার আটকে থাকা
- পানি খেতে গেলে পানি গড়িয়ে পড়া
- থুথু ফেলতে না পারা।
স্ট্রোক হলেও কিন্তু ফেসিয়াল নার্ভ অকেজো হওয়ার কিছু লক্ষণ থাকে। তাই অনেকেই এটাকে স্ট্রোক বলেন। রামসে হান্ট সিন্ড্রোম কিন্তু স্ট্রোক নয়। একজন নিউরোলজিস্ট স্ট্রোক ও রামসে হান্টের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
রামসে হান্ট সিন্ড্রোম নির্ণয়ে পরীক্ষা করার খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে না। তবে কিছু কিছু পরীক্ষা চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো করা যেতে পারে।

চিকিৎসা
এ রোগটিকে খুব মারাত্মক ও বিরল মনে হলেও চিকিৎসা কিন্তু খুবই সহজ। তবে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায় তত উত্তম। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের পাশাপাশি এন্টি-ভাইরাল ওষুধ সেবন করতে হয়। সাথে আরোও কিছু কিছু ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।
এ রোগের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির বেশ ভূমিকা আছে। একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধায়নে ফিজিওথেরাপি নিলে দ্রুত উন্নতির সম্ভাবনা থাকে।

কতটা মারাত্মক
আমাদের দেশে মিডিয়ায় যেভাবে আলোচনা হচ্ছে তেমন কিছুই না এটি। এ রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৯০-৯৫ জন তিন মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যান। খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তির কিছু সমস্যা থাকতে পারে। যেমন- মুখে দুর্বলতা, খেতে গেলে চোখ দিয়ে পানি পড়া।
এ রোগ প্রতিরোধ করার উপায় নেই। তবে কোনো কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এটি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া কোনো কারণ ছাড়াও দেখা দিতে পারে।