Naya Diganta
গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশা

সংস্কারের উদ্যোগ নেই

গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশা

বর্তমান সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায়। তাদের দাবি, এ সময়ে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এটি ঠিক যে, দেশে বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু দেশে কী সামগ্রিক উন্নয়ন হয়েছে, যার সুফল সারা দেশের মানুষ সমভাবে পাচ্ছেন? প্রশ্ন উঠেছে, বড় বড় প্রকল্প কতটুকু জনঘনিষ্ঠ?
বাস্তবতা হলো, কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি। গ্রামীণ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো কোটি টাকার কৃষিপণ্য পরিবহন করা হয়। এ মহূর্তে দেশের বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশা। বেশির ভাগ সড়কে পিচ উঠে খোয়া বেরিয়ে গেছে। ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিপণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষককে। এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই। পুরো পথ থাকে ধুলায়-ধূসরিত। কাঁচা সড়ক বর্ষাকালে কাদায় ডুবে থাকে। এসব সড়কে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান চলাচল তো দূরের কথা, হাঁটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। অন্যদিকে সড়কের পাশের গাছপালা, বসতবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বালুর আস্তরণ পড়ে পরিবেশের ভয়াবহ দূষণ ঘটছে।
উৎপাদিত কৃষিপণ্য সারা দেশে পরিবহনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। তাই গ্রামীণ এসব সড়ক অর্থনীতির উন্নয়নে যে অবদান রাখতে পারত তা হচ্ছে না।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে কথা বলেন সাতক্ষীরা সদর আসনের জাতীয় পার্টির এমপি আশরাফুজ্জামান আশু। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাটের করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘পোস্ট অফিস মোড় থেকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সড়ক হয়ে কোনো অন্তঃসত্ত্বা যদি যাতায়াত করেন, তাহলে রাস্তায় তার সন্তান প্রসব হয়ে যাবে।’
শুধু ওই একটি এলাকা নয়; বরং দেশের প্রায় সব গ্রামীণ সড়কের একই হাল। পাকা রাস্তার বেশির ভাগের অবস্থা খারাপ। কাঁচা রাস্তা যাচ্ছেতাই। অনেক সড়কের বিটুমিন ও ইট উঠে কঙ্কালসার। রাস্তায় রাস্তায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কিছু সড়ক ভেঙেচুরে একাকার। আবার ২০২২ সালে হাওরাঞ্চলে বন্যার সময় বহু সড়ক ভয়াবহভাবে নষ্ট হয়েছে। কিছু অংশ হয়ে গেছে প্রায় নিশ্চিহ্ন। কিন্তু হাওরের অনেক সড়ক এখনো চলাচলের অনুপযোগী। মানুষ স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারেন না।
গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ, আধুনিকায়ন ও মেরামতের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি)। সারা দেশে গ্রামীণ সড়ক রয়েছে তিন লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক এক লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। এলজিইডি প্রতি বছর এসব সড়ক মেরামতের জন্য সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করে। গত বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা চেয়ে মাত্র দুই হাজার ১১৪ কোটি টাকা পেয়েছে এলজিইডি।
এলজিইডির গড় হিসাব অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটার রাস্তা মেরামতে প্রয়োজন হয় ৪০ লাখ টাকা। বরাদ্দের টাকায় পাঁচ হাজার ২৮৫ কিলোমিটার সড়কের মেরামতকাজ করছে সংস্থাটি। সেই কাজ এখনো শেষ হয়নি। মেরামতের বাইরে রয়েছে প্রায় ৭১ হাজার কিলোমিটার সড়ক। এসব সড়কের অবস্থা আরো বেহাল হয়েছে।
যেহেতু গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে গ্রামীণ জনপদের যোগাযোগ সহজ করা বাঞ্ছনীয়। এ জন্য গ্রামীণ সড়ক মেরামত বা সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার।