Naya Diganta

অটোমোটিভ প্রযুক্তিতে তৈরি শাওমির প্রথম গাড়ি এসইউ-৭

পরিবেশ বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। যানবাহনে গ্যাস, ডিজেল বা তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তাই নানান উদ্যোগ নিচ্ছে অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি বাজারে আসা শাওমির বিদ্যুতচালিত গাড়ি বা ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) এসইউ-৭ এমন একটি দৃষ্টান্ত। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে এই গাড়িটি চলবে বিদ্যুৎ শক্তিতে।
দারুণ নকশা, পারফরম্যান্স, রেঞ্জ ও সুরক্ষার ফিচার রয়েছে শাওমির এসইউ-৭ ইলেকট্রিক গাড়িটিতে। ফুল-সাইজ হাই-পারফরম্যান্স ইকো-টেকনোলজি সেডান হিসেবে তৈরি করা হয়েছে শাওমি এসইউ-৭। উন্নত পারফরম্যান্স, ইকোসিস্টেম আর স্মার্ট স্পেস গড়ে তোলার লক্ষ্যের একটি অংশ হলো শাওমির ইলেকট্রিক গাড়ি। শাওমির অটোমোটিভ প্রযুক্তি বা ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে শিল্প উৎপাদন, স্মার্ট সফটওয়্যার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
গাড়িটি নির্মাণ করতে এতে আরো ব্যবহার করা হয়েছে পাঁচ ধরনের প্রযুক্তি : ই-মোটর, ব্যাটারি, শাওমি ডাই-কাস্টিং, শাওমি পাইলট অটোনোমাস ড্রাইভিং ও স্মার্ট কেবিন। এই প্রযুক্তিতে ১০ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি মুদ্রা বিনিয়োগ করেছে শাওমি। এ ছাড়া তিন হাজার চার শতাধিক প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ যুক্ত ছিল এতে।

গাড়ির ইঞ্জিনে ই-মোটর
হাইপার ইঞ্জিন ভি-৬/ভি-৬-এস ও হাইপার ইঞ্জিন ভি-৪-এসসহ ই-মোটর চালু করেছে শাওমি যা ব্যবহার করা হয়েছে এসইউ-৭ গাড়িটিতে। দ্বিমুখী ফুল অয়েল কুলিং প্রযুক্তি ও এস-আকৃতির ডিজাইনে তৈরি করা তেল সার্কিট রয়েছে এই মোটরগুলোতে। গতানুগতিক ইঞ্জিনগুলোর চেয়ে তাই এটি বেশি কর্মক্ষম।
হাইপার ইঞ্জিন ভি-৬/ভি-৬-এস ই-মোটরগুলো ঘূর্ণন গতি এবং পাওয়ার আউটপুট দিয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া শাওমির আরেকটি ই-মোটর হলো হাইপার ইঞ্জিন ভি-৮-এস। যা ইভিগুলোতে ব্যবহার করা হবে ২০২৫ সালের মধ্যে।

শাওমির ব্যাটারি প্রযুক্তি
ইনভার্টেড সেল টেকনোলজি, মাল্টি ফাংশনাল ইলাস্টিক ইন্টারলেয়ার এবং দক্ষ ওয়্যারিং সিস্টেমের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে শাওমির সিটিবি (সেল টু বডি) ইন্টিগ্রেটেড ব্যাটারি টেকনোলজি। এই টেকনোলজির ফলে শাওমির গাড়ির ব্যাটারি ইন্টিগ্রেশনের ক্ষেত্রে দক্ষ হয় ৭৭.৮ শতাংশ। আর গাড়িটির সিএলটিসি রিচার্জ রেঞ্জ থাকে এক হাজার ২০০ কিলোমিটারের বেশি।
ভালো ব্যাটারি পারফরম্যান্সের জন্য তাপ অপচয়ের সমাধানও দেয় শাওমির ব্যাটারি প্রযুক্তি। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রয়েছে আলাদা প্রযুক্তি। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে রিলিফ ভালভ ও শক্তিশালী ১৪ স্তরের সিস্টেম যা দেবে শারীরিক সুরক্ষা।

সহজ উৎপাদনের জন্য ডাই-কাস্টিং
গাড়ি প্রস্তুতকারক হিসেবে চীনের মধ্যে শাওমি এগিয়ে আছে এর উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্য। শাওমির ডাই-কাস্টিং টি-৯১০০ ক্লাস্টার, ডাই-কাস্টিংয়ের ধাতু-উপাদান ও শাওমির টাইটানস মেটাল এই উদ্ভাবনেরই অংশ।
প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে ওজন এবং উৎপাদনের সময় কমিয়ে আনতে সক্ষম ডাই-কাস্টিং প্রযুক্তি। ফলে উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি আরো সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে শাওমির টাইটানস মেটাল শক্তিশালী ও স্থিতিস্থাপক হওয়ায় গাড়ির কাঠামোটি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠে।

ড্রাইভিং সিস্টেমে প্রযুক্তি
উৎপাদনের পাশাপাশি ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে শাওমির নিজস্ব প্রযুক্তি। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাডাপটিভ বিইভি প্রযুক্তি, রোড-ম্যাপিং ফাউন্ডেশনাল মডেল এবং সুপার-রেস অকুপেন্সি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে ড্রাইভিংয়ের সময় নেভিগেশন এবং কোনো সমস্যা চিহ্নিত করা যায় আরো ভালোভাবে। কনফিগারেশনর দিক থেকে শাওমির হার্ডওয়্যার উন্নতমানের হওয়ায় এটি ড্রাইভিং সিস্টেমকে করে তুলে আরো দুর্দান্ত।

স্মার্ট কেবিন
শাওমির গাড়িটি একটি স্মার্ট কেবিন যেটি নির্মাণ করা হয়েছে একটি মানবকেন্দ্রিক ইন্টারঅ্যাকশন ডিজাইনে। এতে রয়েছে ১৬.১ ইঞ্চি আর ৩-কে রিজল্যুশনের সেন্ট্রাল কনসোল, এবং ৫৬ ইঞ্চির একটি এইচইউডি হেড-আপ ডিসপ্লে। সিস্টেমটি শাওমির অন্য ধরনের ডিভাইসগুলো কানেক্ট করতে সুবিধা দেয়। এ ছাড়া এটি হাজারেরও বেশি শাওমি স্মার্ট হোম ডিভাইস সাপোর্ট করে।