Naya Diganta

জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিপক্ষে ওপেক, ক্ষুব্ধ ইউরোপীয় নেতারা

জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিপক্ষে ওপেক, ক্ষুব্ধ ইউরোপীয় নেতারা

জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্পর্কিত শীর্ষ বৈঠকে জীবাশ্ম জ্বালানি বিষয়ক যেকোনো চুক্তির বিরোধিতা করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জ্বালানি রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক।

ফ্রান্সের জ্বালানিমন্ত্রী বলেছেন, ওপেক-এর এমন অবস্থান ‘ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে আরো বিপন্ন করে তুলবে।’

এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ- ২৮। এই সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি-বিষয়ক যেকোনো চুক্তির বিরোধিতা করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ওপেক আহ্বান জানানোর পর, শনিবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জার্মানি, স্পেন এবং ফ্রান্সের নেতারা।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসার অঙ্গীকার করে একটি খসড়া তৈরি করেছেন জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। এরপরই গত সফতাহে ১৩ সদস্য ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ১০ মিত্র দেশের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ওপেক মহাসচিব হাইথাম আল ঘাইস।

চিঠিতে, ‘জীবাশ্ম জ্বালানিকে লক্ষ্য করে নেয়া যেকোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করতে’ অনুরোধ করেন ঘাইস।

‘ক্ষমতার রাজনীতি’ অগ্রগতির প্রতিবন্ধকতা : বেয়ারবক
জার্মানির জলবায়ু দূত জেনিফার মর্গান বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি-বিষয়ক আলোচনা ভেস্তে দেয়ার আহ্বান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে আরো ক্ষতির মুখে ঠেলে দেবে।

তিনি আরো বলেন, ‘এসব দেশগুলো এখন টিকে থাকার লড়াই করছে।’ এমন বাস্তবতায়, এমন আহ্বান কোটি মানুষের জীবনকে বিপন্ন করা বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি আমার হৃদয়ে থাকা ছোট দ্বীপগুলোর কথা ভাবি, তাদের কথা কানে বাজে এবং তারপর যখন আমি ওপেকের এই চিঠির কথা শুনি, তখন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়‘।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, যেসব দেশ তেল ও গ্যাসের উপর খুব বেশি নির্ভর করে, তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

দুবাইয়ে শনিবার বেয়ারবক আরো বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির বিশ্ব থেকে বেরিয়ে আসার উপায়’ খোঁজা হচ্ছে।

ওপেকের কড়া সমালোচনা করে জার্মানির শীর্ষ এই কূটনীতিক আরো বলেন, এটি কঠিন হয়ে উঠছে কারণ, এখনো কিছু দেশ আছে যারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং ‘ক্ষমতার রাজনীতি’ পছন্দ করে।

বিস্ময় ও ক্ষোভ
ওপেক-এর এমন সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফ্রান্সের জ্বালানিমন্ত্রী অ্যাগনেস পানিয়ের রুনাশের এবং স্পেনের জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক মন্ত্রী।

স্পেনের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী তেরেসা রিভেরা। স্পেনের জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক মন্ত্রী তেরেসা রিভেরা।

ফরাসি জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, ‘ওপেক-এর চিঠির কথা শুনে আমি বিস্মিত এবং আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি।’

তিনি বলেন, ওপেক এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে ভঙ্গুর দেশগুলো ও ওইসব দেশে বসবাসরত দরিদ্র মানুষের জীবনকে আরো বিপন্ন করে তুলতে চাইছে।

এমন আহ্বানে প্রভাবিত না হয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আহ্বান জানিয়েছেন এই ফরাসি মন্ত্রী। তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে একট কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে।

স্প্যানিশ মন্ত্রী রিবেরা বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি খুব অগ্রহণযোগ্য বিষয়, ওপেকভুক্ত দেশগুলোর যেখানে থাকা উচিত সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসার ওপর জোর দিচ্ছে।’

তবুও আত্মবিশ্বাসী কপ মহাপরিচালক
কপ ২৮ মহাপরিচালক মজিদ আল-সুওয়াইদি অবশ্য ওপেক-এর চিঠি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নন। তিনি বলছেন, সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণে আলোচনা চলছে।

বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভালো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে