Naya Diganta

টাইটানের পরিণতি ‘আগেই বুঝতে পেরেছিলেন’ টাইটানিক ছবির পরিচালক

টাইটানের পরিণতি ‘আগেই বুঝতে পেরেছিলেন’ টাইটানিক ছবির পরিচালক

হলিউড ফিল্ম নির্মাতা এবং বিখ্যাত টাইটানিক ছবির পরিচালক জেমস ক্যামেরন বিবিসিকে বলেছেন যে ডুবোযান টাইটানের বিপর্যয়কর এই পরিণতি সম্পর্কে তিনি ‘আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।’

জেমস ক্যামেরন ১৯৯৭ সালে এই সিনেমাটি তৈরি করতে গিয়ে, আটলান্টিক সাগরের যেখানে টাইটানিক জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ শতাধিক বছর ধরে ডুবে আছে, সেখানে তিনি ৩৩ বার গিয়েছিলেন।

১৯১২ সালের এই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে এই জাহাজ দুর্ঘটনা নিয়ে তিনি টাইটানিক চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন যা সারা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করেছিল।

জেমস ক্যামেরন বলেন, টাইটান ডুবোযানটি রোববার যখন নিখোঁজ হয়ে যায়, এ সময় তিনি একটি জাহাজে ছিলেন এবং সোমবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগ পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

ক্যামেরন বলেন, তিনি যখন জানতে পারেন যে ডুবোযানটি একই সময়ে তার নেভিগেশন ও যোগাযোগ দুটোই হারিয়ে ফেলেছে, তখনই তিনি তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছিলেন।

‘আমি বুঝতে পারছিলাম কী হয়েছে। ডুবোযানটির ইলেকট্রনিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, একই সাথে -এর ট্র্যাকিং ট্রান্সপন্ডারও অকেজো হয়ে গেছে, তখনই বুঝেছি- এটা শেষ।’

সিনেমার এই পরিচালক আরো বলেন, ‘এ ধরনের ডুবোযানের বিষয়ে যার কাজ করেন তাদের কয়েকজনের সাথে আমি সাথে সাথেই ফোনে যোগাযোগ করি। এক ঘণ্টার মধ্যেই আমি কিছু তথ্য পেয়ে যাই- তারা পানির নিচে অবতরণ করছে। ৩ হাজার ৫০০ মিটার গভীরে। তারা যাচ্ছিল ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে সমুদ্রের তলদেশের দিকে।’

এর আগে আমেরিকান কোস্ট গার্ডের একজন কর্মকর্তা জানান যে- রোববার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া টাইটানের পাঁচজন আরোহীই মারা গেছেন। তিনি বলেছেন ডুবোযানটি ‘বিপর্যয়কর ইমপ্লোশনের’ শিকার হয়েছিল বলে তারা ধারণা করছেন।

বৃহস্পতিবার মার্কিন নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাও সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন যে- ডুবোযানটির বাইরের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলার কিছুক্ষণের মধ্যেই নৌবাহিনী ‘অস্বাভাবিক এক শব্দ’ শনাক্ত করেছিল যার সাথে ইমপ্লোশনের সামঞ্জস্য রয়েছে।

নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা বলেন এই তথ্য মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনীকে জানানো হয়েছিল যার জের ধরে তারা তাদের অনুসন্ধানের এলাকা ছোট করে নিয়ে এসেছিল।

বিবিসি নিউজকে ক্যামেরন বলেন সবকিছুই তার কাছে ‘প্রলম্বিত এক দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল যেখানে লোকজন চারপাশে ছুটাছুটি করছে, দড়াম করে শব্দ হওয়ার কথা বলছে এবং অক্সিজেন ও অন্যান্য নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলছে।’

‘আমি জানতাম যে ডুবোযানটি তার সর্বশেষ গভীরতায় ও জায়গায় পড়ে আছে। তারা ঠিক সেখানেই এটিকে খুঁজে পেয়েছে,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন বৃহস্পতিবার যখন সেখানে পানির নিচে চলতে পারে এরকম যান পাঠিয়েছে, তখনই অনুসন্ধানকারীরা ‘কয়েক ঘণ্টা, সম্ভবত কয়েক মিনিটের মধ্যেই এটিকে খুঁজে পেয়েছে।’

জেমস ক্যামেরন বলেন, এখন সেখানে আরো একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ যোগ হলো। সতর্কতায় কর্ণপাত না করার কারণেই এই দুটো ঘটনা ঘটেছে।

‘ওশানগেটকেও (ডুবোযান টাইটানের পরিচালনাকারী কোম্পানি) সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এই কোম্পানিতে যারা কাজ করতো তাদের কয়েকজন চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু কী কারণে চাকরি ছেড়ে ছিল সেটা তিনি স্পষ্ট করেননি।

জেমস ক্যামেরন আরো বলেন গভীর সমুদ্রে যাওয়ার সাথে যারা জড়িত তারা ওশানগেট কোম্পানির কাছে চিঠি লিখে বলেছিলেন যে তারা বিশ্বাস করেন, তার ভাষায়, ‘তোমরা বিপর্যয়ের পথে যাচ্ছ।’

ক্যামেরনই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি গভীর সমুদ্রে পর্যটন বিষয়ক এই কোম্পানির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মেরিন টেকনোলজি সোসাইটি এমটিএস ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ওশানগেটকে একটি চিঠি দিয়েছিল, এই চিঠিটি নিউ ইয়র্ক টাইমসের হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ‘ওশানগেট বর্তমানে যেসব পরীক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে... তার নেতিবাচক ফল (ছোটখাটো থেকে শুরু করে বড় ধরনের বিপর্যয়) দেখা দিতে পারে।’

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে উত্থাপিত কাগজপত্রেও দেখা যাচ্ছে যে ওশানগেটের সাবেক একজন কর্মকর্তা ২০১৮ সালে ডুবোযানের সম্ভাব্য নিরাপত্তা সমস্যার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

এসব নথিতে দেখা যাচ্ছে কোম্পানির মেরিন অপারেশন্স পরিচালক ডেভিড লকরিজ তার পরিদর্শন রিপোর্টে এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

লকরিজ এবং এমটিএসের এসব উদ্বেগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওশানগেটের একজন মুখপাত্র মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি