Naya Diganta

কালব রিসোর্টে ২ স্টাফের মৃত্যু নিয়ে রহস্য

এমএলএম প্রতিষ্ঠান দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিগ অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (কালব) মালিকানাধীন রিসোর্ট অ্যান্ড কনভেনশন হলের বর্ধিত ভবনে (স্টাফদের থাকার স্থান) দুই কর্মচারীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভেজাল মদপানে তাদের মৃত্যু হয়েছে- কর্তৃপক্ষ এমন দাবি করলেও পোস্টমর্টেম ছাড়াই তাদের লাশ দাফন ও সৎকার করা হয়েছে বলে পরিবার থেকে অভিযোগ উঠেছে।
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির অতি সন্নিকটে অবস্থিত কালব রিসোর্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে ভেজাল মদপান করে (কথিত) রিসোর্টের সুপারভাইজার ইগ্নাসিওস রোজারিও এবং ক্যাশিয়ার খোরশেদ আলমের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসক খোরশেদ আলমকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দিকে অবস্থা গুরুতর হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি বসুন্ধরার এভার কেয়ার হসপিটালে ইগ্নাসিওস রোজারিওকে ট্রান্সফার করা হয়। আইসিইউতে রাখার পর তিনি মারা যান। অভিযোগ উঠেছে, কোনো পোস্টমর্টেম ছাড়াই তড়িঘড়ি করে লাশের দাফন এবং সৎকার করা হয়েছে। অথচ এই বিষয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ও উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ি কিছুই জানে না বলে দাবি করছেন। রহস্যজনক কারণে পোস্টমর্টেম ও অপমৃত্যুর মামলাও হয়নি। এ নিয়ে কালবের ডেলিগেটদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। তবে কালবের অনেকের ধারণা সাবেক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতাদের স্বার্থের দ্বন্দ্বের বলি হতে পারে এই দুই স্টাফ।
এ ব্যাপারে জানতে কালীগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। কারণ তিনি নতুন জয়েন করেছেন। স্থানীয় উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মধুসূধন পান্ডে ও এএসআই মোয়াজ্জেম হোসেন কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আসলে কালবের রিসোর্টের ভিতরে কী হয় না হয় তা আমাদের জানার সুযোগ নেই। তবে কালীগঞ্জ থানার একজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মদপানে মৃত্যুর বিষয়টি আমরা শুনেছি। কালব কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে সমঝোতা করায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি।

অবশ্য বাড়ির মালিক প্রদীপ নাগ এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার বাড়ি কালব রিসোর্টের স্টাফদের থাকার জন্য ভাড়া নিয়েছে। এখন বাসায় তারা মদ পান করে না বিক্রি করে তা আমি জানি না। তবে ঘটনার দিন মদপানে একজন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল- এটা আমি শুনেছি। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ থানা পুলিশ ম্যানেজ করার কারণে অপমৃত্যুর মামলা হয়নি বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। কালব ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রিসোর্টে মদ বিক্রির লাইসেন্স থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মদ সংগ্রহ করা হয়নি। রিসোর্টের স্টাফদের একটি গ্রুপ কালোবাজার থেকে নি¤œমানের ভেজাল মদ সংগ্রহ করে বিক্রি করত। এই কালোবাজারি মদের ব্যবসার সাথে স্থানীয় কয়েকজন মদের কারবারিসহ কালবের লোকজন জড়িত।
সূত্র জানায়, মদপানে নিহতদের একজন জেনারেল ম্যানেজারের আত্মীয়। কালব রিসোর্ট সংলগ্ন প্রদীপ নাগের বাসায় কালোবাজারের ভেজাল মদ সংগ্রহ করে রাখত। রিসোর্টের এ্যানেক্স ভবন হিসেবে ভাড়া করা প্রদীপ নাগের এই বাড়িতে নিহত দু’জনসহ রিসোর্টের সব স্টাফ বসবাস করে। এখান থেকেই মদ রিসোর্টে কাস্টমারদের সরবরাহ করা হতো। ঘটনার পর কালবের কর্মকর্তারাই ঘটনাস্থল থেকে ৮ কেজি ভেজাল ও নি¤œমানের মদ উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, কালব কর্তৃপক্ষ প্রশাসন ম্যানেজ করায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। অতিগোপনে নিহতদের লাশ গ্রামের বাড়ি বগুড়া (খোরশেদ আলম) ও পাবনায় (ইগ্নাসিওস রোজারিও) পাঠিয়ে দেয়। পরিবার যাতে কোনো মামলা না করে সেজন্য কালবের পক্ষ থেকে ও চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে নিহতদের পরিবারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য জেনারেল ম্যানেজার প্যাট্রিক পালমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয় কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে এ বিষয়ে কালবের পরিচালক ও রিসোর্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য রতন রায়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই দিন স্টাফদের একটা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে হয়তো তারা অতিরিক্ত মদপান করে অসুস্থ হয়। এ ঘটনায় দু’জন মারা যায়। কোনো অভিযোগ না থাকায় থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।