Naya Diganta

সাজেকের দুর্গম লংথিয়ান পাড়ায় ডায়রিয়া,আক্রান্ত অর্ধশত, ২ জনের মৃত্যু

সড়ক না থাকায় সাজেকের দুর্গম এলাকা থেকে এভাবে ডায়রিয়া রোগীকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে : নয়া দিগন্ত

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দুর্গম লংথিয়ান পাড়ায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গবতি বালা ত্রিপুরা (৫০) ও দরুং ত্রিপুরা (৬০) নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বনবিহারী চাকমা দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান লংথিয়ান পাড়ায় ২০ জন ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে নারী শিশু বৃদ্ধসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আরো অর্ধশতাধিক মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে।
সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বনবিহারী চাকমা আরো জানান, গত একসপ্তাহ ধরে সাজেকের লংথিয়ান পাড়া, অরুণ পাড়া, কাইজা পাড়া, রায়না পাড়া ও শিয়ালদহ এলাকাসহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এলাকায় আশপাশে কোনো হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় স্থানীয় তান্ত্রিক দ্বারা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এলাকায় যাতায়াতের কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে এতো দূর থেকে মাচালং ও উপজেলা সদর হাসপাতালে রোগী পাঠানো সম্ভব নয়। হেলিকপ্টারে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় যদি মেডিক্যাল টিম পাঠানো যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হবে। না হয় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
সাজেক ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জোপুইথাং ত্রিপুরা জানান, শিয়ালদহ এলাকায় ১০ থেকে ১২ জন ডায়রিয়া রোগী রয়েছে, মূলত ছড়ার পানি থেকে এই রোগ ছড়িয়েছে ২০১৬ সালে এখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। পরে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মেডিক্যাল টিম দীর্ঘ এক মাসের চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে আসে। এবারো দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এলাকাটি খুবই দুর্গম। পায়ে হাটা পথ ছাড়া বিকল্প নেই। মূলত খাবার পানি থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে। আমরা সংবাদ পাওয়ার পরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার (ইউএইচএফপিও) ডা: অরবিন্দু চাকমার সাথে যোগাযোগ করে একটি মেডিক্যাল টিম পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাশের বিজিবি বিওপি থেকেও স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিক্যাল অফিসার ডা: অরবিন্দু চাকমা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৪ সদস্যদের একটি মেডিক্যাল টিম প্রয়োজনীয় ওষুধ স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ সাজেকের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে। সাজেকের কংলাক পাড়া থেকে হেঁটে ঘটনাস্থলে পৌঁছুতে একদিন লাগবে। মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা পৌঁছালে আরো বিস্তারিত জানতে পারব।
রাঙ্গামাটি সির্ভিল সার্জন ডা: বিপাশ খীসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতেই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের তথ্য আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। খুব ভোরেই আমরা একজনকে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দিয়েছি। দুর্গম হওয়ায় তিনি কাল সকাল নাগাদ ওই এলাকায় পৌঁছাতে পারবে। এ ছাড়া প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কলেরার স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধপত্র দিয়ে আরো একটি টিম আমরা ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় পাঠাচ্ছি।