Naya Diganta

কোনো মতে খেয়ে পরে বাঁচতে চাই

কোনো মতে খেয়ে পরে বাঁচতে চাই

প্রস্তাবিত বাজেটে কারো জন্যই কোনো সুখবর নেই বলে মনে করেন নিম্ন আয়ের মানুষ ও প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। এই বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সবার জন্যই করের খড়গ ও অতিরিক্ত খরচের বোঝাও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও সাধারণ মানুষ চাইছেন অন্তত তারা যেন কোনো মতে খেয়ে পরে বাঁচতে পারেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালে থাকে।

গাজীপুরের ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার আয় ২০ হাজার টাকা হয়, বর্তমানে আমার সংসারের খরচই হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। এই বাজেটে আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুখবর কী আছে? তিনি বলেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে আমরা জর্জরিত, এর পরে অতিরিক্ত করের বোঝা যদি চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমরা যাব কোথায়। তার দাবি, সরকারের উচিত নাগরিক সুবিধা বাড়ানো। এই মুহূর্তে দেশে বিদ্যুৎসঙ্কট প্রকট। গ্যাসেরও জোগান কম। সরকারের উচিত এসব বিষয়ে নজর দেয়া। সাধারণ মানুষের রুটি রুজি নিশ্চিত করা। অন্যথায় বিপন্ন সাধারণ মানুষ যদি রাস্তায় নামে তাহলে তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হবে।

সাভারের আশুলিয়ার একটি মাধ্যমিক স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক জিল্লুর রহমান মনে করেন, বেসরকারি পর্যায়ের কোনো লোকেরই বেতনভাতা বাড়ানো বা আয় বাড়ানোর কোনো ইঙ্গিত নেই। বিশেষ করে শিক্ষকদের জন্য এই বাজেটে কোনো সুখবর নেই। বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট দেয়ারও ঘোষণা নেই। এই বাজেটে শিক্ষক সমাজের জন্য ভালো কোনো সুখবর নেই। এই বাজেটে শিক্ষকসমাজ হতাশ হয়েছেন।

সাভারের জামগড়া ইউসুফ মার্কেট এলাকার নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসায়ী কবির হোসেন মণ্ডল বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম ইতোমধ্যে অনেক বেড়ে গেছে। গত এক বছরের ব্যবধানে সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি দেড় শ’ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। রডের দামও বেড়েছে। এই বাজেটে দাম আরো বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। এতে নির্মাণ ব্যবসায় ধস নামতে পারে। বিশেষ করে নির্মাণ ব্যবসা থেকে সরকার যে রাজস্ব পায় এই বাজেটে দাম বাড়ানোর ঘোষণায় সেই রাজস্ব আয়ও কমে যেতে পারে। এতে সরকারের জন্য অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় রিকশা চালান আবুল হোসেন। বাড়ি জামালপুরে। তিনি জানান, সরকার বাজেট দিছে, এটাতো আমরা বুঝি না। আমরা বুঝি চালের দাম যেন আর না বাড়ে। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে ছেলেমেয়েরা নিয়া চলা কঠিন হয়া গেছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করা তরুণ মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটের অনেক ভালো ও মন্দ দিক আছে। এবার সর্বনিম্ন আয়কর দুই হাজার টাকা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এটা একেবারেই অবাস্তব। এমনিতেই তো আমরা সবকিছুতেই সরকারকে কর দেই। স্বল্প বেতনে যারা চাকরি করেন তাদের জন্য এই আয়কর জুলুম হয়ে যাবে।

শিক্ষা ধংসের বাজেট : অন্য দিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘শিক্ষা ধ্বংসের বাজেট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট্রের নেতারা। তারা বলছেন, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত জনগণকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত। জিডিপির অনুপাতে বাজেটে কম বরাদ্দ শিক্ষার প্রতিটি স্তরে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত জনগণকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত। এ বাজেট শিক্ষা ধ্বংসের বাজেট। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। উপরন্তু এই বাজেট মানুষকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়ার শামিল। কারণ জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোয় যেমন বরাদ্দ কমেছে তেমনি শিক্ষা খাতেও কমেছে।

ইউনেস্কোর মতে, কোনো দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা উচিত। সেখানে এ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ! গত বাজেটে যা ছিল ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এ বরাদ্দ খুবই কম, কিন্তু সরকার এই অর্থবছরে আরো কমিয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাজেটে কম বরাদ্দ শিক্ষার প্রতিটি স্তরেই মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।