Naya Diganta

বন্যা আতঙ্কে ইসলামপুরের যমুনাপাড়ের মানুষ

ইসলামপুরে গুঠাইল-উলিয়া বাজার বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় যমুনার পানি বাড়লে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে : নয়া দিগন্ত


বাড়তে শুরু করেছে যমুনার পানি। বন্যা আতঙ্কে লাখ লাখ মানুষ। গুঠাইল বাজার-উলিয়া বাজার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় চরম বন্যা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ।
জানা যায়, যমুনার মুখে লাগাম নামে পরিচিত বন্যা হরিণধরা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি প্রায় একযুগ আগে যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে পশ্চিম জামালপুরের যমুনা তীরবর্তী উপজেলাগুলো রয়েছে নদীর থাবার মুখে। যে কারণে যমুনায় পানি বাড়লেই জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। পানিবন্দী হয়ে পড়ে লাখ লাখ পরিবার।

একসাথে সকল মানুষকে বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ইসলামপুর সদরের চাঁদপাড়া থেকে কুলকান্দি ইউনিয়নের মিয়া বাজার পর্যন্ত এবং চিনাডুলী ইউনিয়নের পশ্চিম ভাবনা থেকে শিংভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে আংশিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আংশিক ওই বাঁধ নির্মাণের ফলে উপজেলার কুলকান্দি, পার্থশী ও চিনাডুলী ইউনিয়নের কিছু এলাকা বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু যমুনা নদী থেকে উঠে আসা মূল চ্যানেলটির মুখ এখনো অরক্ষিত রয়েছে। চ্যানেলটিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না দেয়ায় যমুনার পানি বাড়লেই ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভা এবং মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর, কুলিয়া, ঝাউগড়াসহ ১০টি ইউনিয়নে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়।

এলাকাবাসী জানায়, প্রতি বছর বন্যার সময় তাদের হাত পেতে ত্রাণ নিতে হয়- যা খুব লজ্জার। যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
শিংভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল বাসেত বলেন, ‘সারাজীবন শুধু রিলিফ খাইলাম, এখন পেট শক্ত হয়ে গেছে। এখন আর রিলিফ খাইতে চাইনে, একটা বাঁধ চাই।’ ডেবরাইপেচ গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার বাঁধের জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রিলিফ দিতে হয়। আর আমাদের কোটি কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়।’
পার্থশী ইউপি চেয়ারম্যান ইফত্তেখার আলম বাবুল বলেন, পার্থশীর খানপাড়া থেকে দেওয়ানগঞ্জ সীমানা পর্যন্ত এক কিলোমিটার বাঁধ অরক্ষিত রয়েছে।
বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, কুলকান্দি সরাবাতা থেকে গুঠাল বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বাঁধটি নির্মাণ হলে ৩০টি গ্রাম বন্যা মুক্ত হবে।

চিনাডুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, গুঠাইল বাজার-উলিয়া বাজার ৬ কিলোমিটার বাঁধ না থাকায় ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ বন্যা আতঙ্কে রয়েছে।
ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, পার্থশী ইউনিয়নের খানপাড়া থেকে দেওয়ানগঞ্জ সীমানা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, কুলকান্দি সরাবাতা থেকে গুঠাল বাজার পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এবং চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল বাজার থেকে উলিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।