Naya Diganta
মুডিস রেটিংয়ে ঋণমান হ্রাস

বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ার শঙ্কা বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যয় বেড়ে যাবে

মুডিস রেটিংয়ে ঋণমান হ্রাস


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়ায় বেসরকারি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এতে বেসরকারি বিনিয়োগই কমবে না, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে ব্যয় বেড়ে যাবে। পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাবে। এমনিতেই ডলার সঙ্কটে অর্থনীতি আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে, এরওপর মুডিস রেটিংয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, এ যেন দেশের অর্থনীতির জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, মুডিস রেটিংয়ে দেশের ঋণমান কমে যাওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়বে বেসরকারি খাতে বিদেশী বিনিয়োগে। কারণ দেশের ঋণমান কমে যাওয়ার অর্থই হলো ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা কমে যাওয়া। এতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে শঙ্কিত হয়ে পড়বেন। পুঁজিবাজারেও বিদেশী বিনিয়োগকারী কম আসবেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, নানা কারণে দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে এসেছে, এর ওপর মুডিস রেটিংয়ে দেশের ঋণমান কমে যাওয়ায় অর্থনীতির জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের ঋণমান কমে যাওয়ার অর্থই হলো দেশে যেসব ভালো ব্যাংক ছিল তাদেরও রেটিং খারাপ হয়ে গেল। এতে প্রধান সঙ্কট হবে, দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে। রেটিং খারাপ হওয়ার অর্থ হলো দেশে বিদেশী ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা কমে যাওয়া। এ কারণে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যে পরিমাণ আমদানি রফতানি করা হয়, তার জন্য এলসি খুলতে তৃতীয় কোনো বিদেশী ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের গ্যারান্টি নিতে হবে। এতে ব্যবসা ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। আর ব্যবসা ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অর্থই হলো স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যের প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে। স্থানীয় বাজারেও পণ্যের মূল্য আরো বেড়ে যাবে।

দ্বিতীয় সঙ্কট হলো বেসরকারি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ বিদেশীরা বিনিয়োগ করে তাদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করবে। এতে বিদেশী বিনিয়োগ আরো কমে যেতে পারে। তৃতীয়ত হলো, পুুঁজিবাজার থেকে ইতোমধ্যে অনেক বিদেশী বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়ে গেছে। ওই সব বিনিয়োগ আবার ফেরত আসা তো দূরের কথা, নতুন বিনিয়োগ করতেও বিনিয়োগকারীরা চিন্তাভাবনা করবেন। সবমিলেই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই ডলার সঙ্কট চলছে। ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীদের কলকারখানা চালু রাখতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। জ্বালানি কিনতে না পারায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানি না পেয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নানা উপায়ে বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে ডলার আনার চেষ্টা করছেন। মুডিস রেটিংয়ে এটা এখন বাধাগ্রস্ত হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহও কমে যেতে পারে। সবমিলেই এটা দেশের অর্থনীতিতে নানা শঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

এ দিকে গতকাল আবারো রেমিট্যান্স ও রফতানির ডলারের দাম বাড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন বাফেদা। তারা গতকাল রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করেছে এবং রফতানির ডলার ১০৬ টাকা থেকে ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা করেছে। এর সরাসরি প্রভাব আগামী সপ্তাহে আমদানির ওপর পড়বে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। কারণ বর্ধিত মূল্যে ডলার কিনে তা বিক্রি করতে হবে বাড়তি মূল্যে। এতে পণ্যের আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। আগের বিএ৩ থেকে কমিয়ে বি১ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংয়ের ক্ষেত্রে আগের মতো ‘নট প্রাইম’ মান বজায় রয়েছে। অপর দিকে বাংলাদেশের জন্য পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রেটিং সংস্থাটির মূল্যায়ন অনুযায়ী, বৈদেশিক লেনদেন ও তারল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি রয়েছে। এর সাথে চলমান সঙ্কটকালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও দেখা গেছে। যে কারণে সর্বভৌম ঋণমানের রেটিং কমিয়ে বি১ করা হয়েছে।