Naya Diganta

শোকর আদায়

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা আমার স্মরণ করো আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা আল-বাকারাহ-১৫২) আমাদের জীবন আল্লাহর নিয়ামতে পূর্ণ। অফুরন্ত সে নিয়ামতের শোকর আদায় করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। তবে শোকরের অর্থ কী? কোন প্রক্রিয়ায় শোকর করা যায়?
শোকরের অর্থ উপকারীর উপকার স্বীকার করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। গোপনে, প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্য করা। অবাধ্যতা, নাফরমানি থেকে বিরত থাকা। হজরত মূসা আ: আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহ আমি কিভাবে আপনার শোকর আদায় করব। আল্লাহ উত্তরে বললেন- ‘মূসা! সবসময় আমাকে স্মরণ করো, ভুলো না। আল্লাহকে স্মরণ করাই শোকর।’ (ইবনে কাসির)
আল্লামা কারি তৈয়ব রহ: বলেন, শোকরের সাথে তিনটি জিনিস জড়িত আছে- ১. অন্তর; ২. জিহ্বা ও ৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
অন্তরের শোকর বলতে বোঝায়, আল্লাহ প্রদত্ত জীবন-জীবিকা, সুযোগ-সুবিধাই আমরা প্রতি মুহূর্তে ভোগ করি। সুতরাং মন থেকে তা স্বীকার করে তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শোকর হলো- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে নেক আমল করা, আল্লাহর আনুগত্যে ব্যবহার করা। (তাফসিরে বুরহানুল কুরআন)
জিহ্বার শোকর হলো- আল্লাহ প্রদত্ত সব নিয়ামতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। হাদিস শরিফে এসেছে জবানের উত্তম শোকর হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, যে বান্দা তিনটি গুণ অর্জন করবে আল্লাহ তাকে তিনটি পুরস্কার দান করবেন- ১. নিজের রহমতে আবৃত করবেন; ২. বিপদে আশ্রয় দেবেন; ৩. আল্লাহ তাকে স্বীয় অফুরন্ত ভালোবাসা দেবেন। সাহাবিরা জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা: সেই গুণগুলো কী? রাসূল সা: বললেন, ‘যে বান্দা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে শোকর আদায় করে, প্রতিশোধ নেয়ার শক্তি থাকতেও কারো অপরাধ ক্ষমা করে দেয়, প্রচণ্ড রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখে।’ (বায়হাকি, তাফসিরে বুরহানুল কুরআন) হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে শোকর আদায় করে তার প্রতিদান ওই ব্যক্তির মতো যে ধৈর্যসহ রোজা রাখে।’ (তিরমিজি, বুরহানুল কুরআন)
বান্দা শোকর আদায় করলে কখনো তার নিয়ামত শেষ হয় না। সুতরাং সর্বদা আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।