Naya Diganta

সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে চান ইমরান

সমর্থক ও শীর্ষ সহযোগীদের ওপর একের পর এক মামলা, তদন্ত, বহু নেতার দল ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘোষণায় তুমুল চাপে পড়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের শিগগিরই তার সাথে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছেন। গত বছর ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই সেনাবাহিনীর সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন ইমরান। যে অনাস্থা ভোটে তিনি পরাজিত হন, তার পেছনে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ জেনারেলদের ষড়যন্ত্র ছিল বলে তখন থেকেই তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান অভিযোগ করে আসছিলেন। সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে তাকে ইসলামাবাদ হাই কোর্ট চত্বর থেকে গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে সহিংসতা বাধলে সেনাবাহিনী-ইমরান বিবাদ চরম আকার ধারণ করে। ‘আমি আলোচনায় বসতে অনুরোধ করছি, কেননা যা হচ্ছে তা কোনো সমাধান নয়’ পাকিস্তান অরাজক পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে সতর্ক করে শুক্রবার ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।’
পাকিস্তানে এমন এক সময়ে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে যখন দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক অবস্থা পার করছে। দেশটির মূল্যস্ফীতি এখন রেকর্ড উচ্চতায়, প্রবৃদ্ধি রক্তশূন্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অর্থ ছাড় না করলে দেশটি শিগগিরই ঋণখেলাপিতে পরিণত হতে পারে এমন শঙ্কাও রয়েছে।
পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের পর দলটির কর্মী-সমর্থকরা পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল; এর পরপরই ইমরানের বেশির ভাগ সহযোগী গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাদের অনেকে পরে ছাড়াও পেয়ে যান এবং কিছু সময় পর পিটিআই থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দেন। মধ্যস্তরের অনেক নেতাও এরই মধ্যে দল ছেড়েছেন।
ইমরান বলছেন, তাকে দুর্বল করতে, তার দলকে ভেঙে দিতে যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার ফলে বাধ্য হয়েই অনেকে দল ছাড়ছেন। সামরিক স্থাপনায় হামলার সাথে নিজের দলের দূরত্বও বজায় রাখছেন তিনি। হামলায় কারা জড়িত, তা বের করতে তদন্তের আহ্বানও বারবার করেছেন তিনি। দলছাড়া নেতাকর্মীদের অনেকেই বলছেন, তারা স্বেচ্ছায় পার্টি ছাড়ছেন। কেউ কেউ বলছেন স্বাস্থ্যগত বা পারিবারিক উদ্বেগের কথাও।
তবে এসব কিছুই ইমরানকে দমাতে পারছে না। দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেছেন, সরকারি দমনপীড়ন তার দলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েই চলছে। নির্বাচন যখনই হোক, তখনই জিতবেন বলেও আশাবাদী তিনি। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশকে বর্তমান সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতেই তিনি আলোচনায় বসতে চান। চলতি বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা; তাতে ইমরানের দলই ভালো করবে বলে এখন পর্যন্ত হওয়া বিভিন্ন জনমত জরিপে ইঙ্গিত মিলছে।
এ দিকে পিটিআই চেয়ারম্যান কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, সরকার, সেনাবাহিনীর সাথে মধ্যস্থতায় তিনি একটি কমিটি গঠন করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তার এই আলোচনার প্রস্তাব এসেছে বলে মত বিশ্লেষকদের। ইমরান বলেছেন, এর আগেও তিনি পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেলদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেসব চেষ্টায় সাড়া মেলেনি। অন্য দিকে সরকারও তার সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখাচ্ছে না, উল্টো দমনপীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে।
৩ শীর্ষ নেতার গ্রেফতার বেআইনি
পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা শাহ মেহমুদ কুরেশি, এজাজ চৌধুরী ও দলটির সাবেক সদস্য মালিকা বোখারিকে আটক বেআইনি বলে রায় দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। এ রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মিয়াগুল হাসান আওরঙ্গজেব। তিনি বলেন, এর কারণ পরে সবিস্তারে জানানো হবে। তাৎক্ষণিকভাবে রিট পিটিশন অনুমোদন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে দলীয় চেয়ারম্যান ইমরান খানের আটককে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বেআইনি বলে ঘোষণা দেন।