Naya Diganta

কান উৎসবে ডিক্যাপ্রিও উন্মাদনা

কান উৎসবে ডিক্যাপ্রিও উন্মাদনা


তারকা, মহাতারকাদের কানে আগমন নতুন কিছু নয়। তবে টাইটানিক তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর উন্মাদনা ছিল তাদের থেকে ভিন্ন। ৭৬তম কান উৎসবের ষষ্ঠ দিন তিনি যখন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাজির হয়েছিলেন তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বিভিন্ন দেশের শত শত সাংবাদিক। কারণ সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাবার জায়গা সঙ্কলন ছিল না।
কানে এবার ডিক্যাপ্রিও হাজির হয়েছিলেন ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ ছবির প্রচারণার জন্য। ছবিটি এবারের উৎসবে প্রতিযোগিতার বাইরে রয়েছে। এটি পরিচালনা করেছেন অস্কার জয়ী নির্মাতা মার্টিন স্করসেসি। রোববার কলাকুশলীদের নিয়ে তার সংবাদ সম্মেলনে হাজির থাকার কথা ছিল বেলা সোয়া ১টায়। যদিও সেটি প্রায় ২০ মিনিট বিলম্ব হলো। কারণ ফটোকলে ছবিয়ালদের আবদারের চাপ। বেলা ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ সংবাদ সম্মেলনে এসে হাজির হতেই করতালিতে ভেসেছেন তারা।

আগের দিন (২০ মে) সন্ধ্যায় পালে ভবনের লালগালিচায় ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ টিমের সঙ্গে এসে নামেন ডিক্যাপ্রিও। তখন তাকে ঘিরে উন্মাদনা ছিল দেখার মতো। শুধু তাই নয়, গাড়ি থেকে নেমে লালগালিচায় ঢোকার আগে সড়ক বিভাজকে অপেক্ষমাণ ভক্ত-দর্শকদের সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে যান তিনি। তাকে দেখামাত্রই পুরো কানসৈকত যেন চিৎকার দিয়ে উঠলো!
ডিক্যাপ্রিওর এমন সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ঘটনা সবারই মন ছুঁয়ে গেছে। পথের ধারে দাঁড়িয়ে অনেককে অটোগ্রাফ দিয়েছেন তিনি। এবারের কান উৎসবে হলিউড সুপারস্টার জনি ডেপ প্রথম আকর্ষণ থাকলেও লিওনার্দো তার রোমান্টিক ইমেজ এখনও ধরে রেখেছেন, যার বীজ বপন করেছেন ২৫ বছর আগে ‘টাইটানিক’ দিয়ে।

লালগালিচায় লিওনার্দো যতটা প্রাণবন্ত ছিলেন, ততটাই যেন সুবোধ বালকের বেশে চুপচাপ বসে ছিলেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। মার্টিন স্করসেসির পরিচালনায় ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ হলো তার ষষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নৈতিকভাবে রহস্যময় মানুষদের পর্দায় তুলে ধরার ক্ষেত্রে স্করসেসির মুন্সিয়ানার প্রশংসা করেন ডিক্যাপ্রিও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রূপ বদলানো কিংবা অশুভ চরিত্রের ভেতরেও মানবতা প্রকাশ করতে মার্টির জুড়ি নেই। তার এই দক্ষতা অবিশ্বাস্য, এটা কখনও কল্পনা করতে পারে না কেউ।’
২০১৭ সালে প্রকাশিত আমেরিকান কথাসাহিত্যিক ডেভিড গ্রানের জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন : দ্য ওসেজ মার্ডারস অ্যান্ড দ্য বার্থ অব দ্য এফবিআই’ অবলম্বনে সাজানো হয়েছে ৩ ঘণ্টা ২৬ মিনিট দৈর্ঘ্যরে সিনেমাটি। ১৯২০ শতকের আমেরিকান রাজ্য ওকলাহোমায় তেল আবিষ্কারের পর রহস্যজনকভাবে ওসেজ উপজাতির একের পর এক সদস্যের নৃশংসভাবে খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে ছবিটির গল্প। ঘটনার তদন্তে নামে নবগঠিত এফবিআই।

গল্পের প্রয়োজনে ওসেজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন মার্টিন স্করসেসি। ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ নির্মাণের পেছনে তাদের গুরুত্বের কথা জানিয়ে ৮০ বছর বয়সী এই আমেরিকান নির্মাতা বলেন, ‘বইটি আমার কাছে দেওয়ার পর বলেছিলাম, আমরা যদি আদিবাসী জাতির কাছাকাছি কোথাও যাই তাহলে তাদের খুব সম্মান করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন ওসেজ নেশন প্রধান জিওফ্রে স্ট্যান্ডিং বিয়ার। তিনি ছবিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কথায়, ‘আমাদের সম্প্রদায়কে অনেক ভুগতে হয়েছে। আজ অবধি সেসব প্রভাব আমাদের ওপর রয়েছে। তবে ওসেজ নেশনের পক্ষ থেকে বলতে পারি, মার্টি ও তার দল বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে। আমরা জানি, বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে বের হওয়ার পর লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে লিফটের সামনে দাঁড়াতে হলো খানিকক্ষণ। তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সংবাদকর্মীদের কেউ কেউ লিও, লিও বলে ডাক দিলেন। মাঝে মধ্যে হাত নেড়ে তাতে সাড়া দিলেন লাখো তরুণীর কাক্সিক্ষত পুরুষ। চার বছর আগে সর্বশেষ কানসৈকতে এসেছিলেন। আবারও তিনি সাগরপাড়ের এই শহরে ফিরলেন। প্রতিবারই আয়োজকরা তার একটি ছবি রাখলে মন্দ হতো না- ভক্তদের মনের বাসনা যেন এমনই!