Naya Diganta
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া

ইতিবাচকভাবে দেখছে আ’লীগ

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া

বেশ কিছু দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা কিংবা অন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। সেই আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক বিশ্বের মোড়ল এ রাষ্ট্রটি। নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পরই স্বাগত জানিয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। তবে নতুন এ ভিসানীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও আপাতত ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সরকারি দল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার এক ঘোষণায় বলেছেন, গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য যেকোনো বাংলাদেশী ব্যক্তি যদি দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। এর আওতায় পড়বেন সরকারি বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্য এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের লোকজন।

এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও নতুন ভিসা নীতিতে সরকার বা কোনো পক্ষের নাম সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। তার পরও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত হওয়ার কারণে এই ঘোষণা তাদের জন্য এক প্রকার চাপ।
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অতীতের মতো সরকারের কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থার লোকজনের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো সেটি দল ও সরকারের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হতো। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে সরে এসে নতুন একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যেটা শুধু সরকার বা সরকারি দলের লোকজনের জন্য প্রযোজ্য নয়, এটি দেশের সব মানুষ ও দলের জন্য প্রযোজ্য। ফলে এটি নিয়ে চিন্তার কোনো কিছু নেই। চাপ অনুভবেরও কোনো কারণ নেই। কারণ সরকারও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ চায়।

এ প্রসঙ্গে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে বাংলাদেশ কোনো বাড়তি চাপ মনে করছে না। এ ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেই বিষয়ে সরকার চিন্তিত নয় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এটা সরকারি ও বিরোধী দল, সিভিল সোসাইটি সবার জন্য প্রযোজ্য। যারাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আমরাও বারবার বলেছি, প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা যেকোনো মূল্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন করব। তাই আমি মনে করি, এটি সবার জন্য সতর্কবার্তা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক প্রতিক্রিয়ায় গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী প্রথমবারের মতো গঠিত এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই দুটো জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের সব ক’টি নির্বাচন ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরাও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাতে দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার সমন্বিত থাকে এটি সরকার এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার। তিনি বলেন, স্বচ্ছ ভোট, ভোট গ্রহণ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ এটিকে আমরা চর্চা করি। বৃহত্তর পরিসরে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্রচর্চা ও ভুয়া ভোটার বাতিল, ভোটার আইডি কার্ড প্রদানসহ ভোট প্রদানের আইডেন্টিফিকেশনের যে কাজগুলো হয়েছে এটার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সব কিছু মিলিয়ে আমরা নির্বাচন চাই এবং নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখতে চাই।

তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, হুমকি-ধমকি দিতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি তাদের বিপক্ষে যাবে। তিনি আরো বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত, ভোট প্রদানে বাধা ও ভয়ভীতি দেখায় তাদের বিপক্ষেই এই নীতিমালা ঘোষণা বলে আপাতত মনে করছি। এ ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতসহ যারা নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বৈরতান্ত্রিক ও অগতান্ত্রিক পথে হাঁটার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে এটা একটা সিগন্যাল হিসেবে আমরা আপাতত বিবেচনায় নিচ্ছি।