Naya Diganta

ছোটদের দুখু

বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ একজন বড় কবির জন্মদিন, সবার প্রিয় কবি তিনি। ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল দুখু, নুরু, ব্যাঙাচিসহ আরো অনেক নাম! নিশ্চয় তোমরা বুঝতে পারছ আমি কার কথা বলছি! তার নাম কাজী নজরুল ইসলাম। নামটা তো চেনাই তোমাদের। আচ্ছা, খোকা-খুকিরা তোমাদের মনে কি প্রশ্ন জাগে না, তোমাদের কত সুন্দর সুন্দর ডাকনাম। আর এত নাম থাকতে তার নাম ‘দুখু’ কেন? তাহলে শোনো, দুখুর আগে তার আরো চার ভাই জন্মেছিল। কিন্তু সবাই মারা গিয়েছিল, কেউ বাঁচেনি। তাই বাবা-মায়ের মনে অনেক দুঃখ। তাই, তারা দুঃখ প্রকাশ করলেন আর ভাবলেন, এই ছেলের ভালো নামের দরকার নেই। ভিন্ন ধরনের একটি নাম রেখে দিই, ঠিক তাই হয়েছে। তবে ছোটবেলা থেকেই দুখুর দুঃখের শেষ ছিল না। মাত্র ৯ বছর বয়সেই তার বাবা ফকির আহমদ মারা যান। এই শুরু হলো তার দুঃখ। সেই বয়সেই সংসারের হাল ধরতে যান মক্তবের শিক্ষক হন, হন মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং ইমাম। সেই থেকে শুরু। এরপর লেটো দলে যোগ দেয়া, কখনো রুটির দোকানের কর্মচারী- এভাবেই কেটেছে তার শৈশব। পাশাপাশি চলছিল পড়াশোনা। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়তেই তাকে দু’বার স্কুল ছাড়তে হয়েছে। নজরুল ছিলেন খুব মেধাবী। বার্ষিক পরীক্ষার ফল তার এতটাই ভালো হলো যে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ডাবল প্রমোশন দিয়ে দিলো। অর্থাৎ ক্লাস সেভেন থেকে এক লাফে ক্লাস নাইন। সেখানে নজরুল নিজগুণে সাত টাকা বৃত্তি পেয়ে, বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পান। এখন তোমাদের শোনাই, সেখানে পড়াকালে নজরুলের ছোট্ট একটি ঘটনা। নজরুল যে ক্লাসে পড়তেন সে ক্লাসে গরুর রচনা মুখস্থ করতে দেয়া হলো। নজরুল তো মুখস্থ করার লোক না, শিক্ষক তাকে বকাঝকা করছেন। শিক্ষক বললেন, ‘তুই তো বাউণ্ডুলে, বল গরুর রচনা মুখস্থ, বল!’ নজরুল প্রশ্ন করে, ‘স্যার রচনা মানে কী?’ স্যার বলেন, ‘তুই প্রথম আট লাইন মুখস্থ করেছিস কি না বল? নজরুল বলে, ‘না, স্যার। রচনা মানে কী আমি আপনার কাছে জানতে চাই।’ শিক্ষক বলেন, ‘রচনা মানে বানানো। নজরুল বলে, বানানো হলে মুখস্থ করলে বানানো হলো কিভাবে? তখন শিক্ষক বলেন, ‘বেয়াদব! রচনা বানানোর মুরদ তোর আছে? নজরুল বলে ‘হ্যাঁ, স্যার! আমি বানাবো, তা গদ্যে বানাবো না পদ্যে?’ শিক্ষক বলেন, ‘বেয়াদব পদ্যে আবার রচনা হয় নাকি? নজরুল বলে, ‘নিষেধ কোথায় স্যার?’ দ্বিতীয়বার ধরা খেয়ে শিক্ষক বলেন, ‘ঠিক আছে গদ্যেই লিখ, পদ্যে লিখতে হবে না। তখন নজরুল বলে ‘বাংলায় লিখব, না ইংরেজিতে লিখব স্যার? শিক্ষক বলেন, ‘দুই অক্ষর ইংরেজি জানিস না, বাউণ্ডুলে! তুই আবার ইংরেজিতে রচনা লিখবি?’ নজরুল বলে, ‘স্যার আমি লিখব। স্যার, কিসের ওপর লিখব?’ শিক্ষক বলেন, ওই তো গরু নিয়ে লিখবি। নজরুল বলে, ‘স্যার, আকাশে পাখি উড়ছে, গরু নিয়ে লিখব কেন? তখন স্কুলের আকাশে শকুনীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিক আছে ওই পাখির ওপর লিখবি। নজরুল বলে, ‘দেন স্যার কাগজ’। তাৎক্ষণিক নজরুল সাত পৃষ্ঠার রচনা লিখে ফেলল। ছোট্ট খোকা-খুকিরা, কী ভাবলে? অবাক হয়ে গেলে, নিশ্চয়? অবাক হওয়ার কিছু নেই, একটু চেষ্টা করো, দেখবে তোমরাও পারবে, যেভাবে পেরেছিল বাংলার দুখু, আমাদের প্রিয় কবি। আমাদের আরো জানতে হবে তার সম্পর্কে। আমরা কবিকে স্মরণ করব, তার জীবনী পড়ব এবং পাঠ করব তার কবিতা।