Naya Diganta
লবণের রেকর্ড উৎপাদন

তারপরও দাম বৃদ্ধি কেন

লবণের রেকর্ড উৎপাদন


দেশে মূল্যস্ফীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এতে সব নিত্যপণ্যের দাম বর্তমানে আকাশছোঁয়া। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে প্রায় সব জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাদ্যপণ্য। এ পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে বেশির ভাগ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। তারা রীতিমতো দিশেহারা। সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবার চাহিদা মেটাতে খাবি খাচ্ছেন। নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হওয়ায় জীবন ধারণের জন্য অনেক কিছু কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। এ কারণে সরকারের উন্নয়ন বয়ান সাম্প্রতিক সময়ে হালে পানি পাচ্ছে না। যদিও বিগত প্রায় ১৫ বছরে দেশে উল্লেখ করার মতো কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে এটি চরম বাস্তবতা যে, গত দেড় দশকে সরকারসংশ্লিষ্ট একটি গোষ্ঠী বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে। এরা ছাড়া বাকি সবাই ভাগ্যবিড়ম্বিত। ফলে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়বৈষম্য চরমে পৌঁছেছে।
দেশে বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে এক ধরনের অস্থিরতা। সম্প্রতি তেল-চিনির দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার। তবে পণ্য দু’টি বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে। ধানের ভরা মৌসুমেও চালের দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যে আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। পরিমাণে কম ব্যবহার করতে হলেও লবণ আমাদের রান্নাঘরের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। প্রতিটি তরকারি রান্নায় লবণ ব্যবহার করতে হয়। মোট কথা, লবণ ছাড়া রান্না চলে না।

বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লবণ পাওয়া যায়। এসব লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা কেজি দামে। এক বছর আগে দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে লবণের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। এখন আবার লবণ মিলমালিকরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৪৫ টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই হিসাবে কেজিতে তিন টাকা বাড়তে পারে। গত সপ্তাহে এ নিয়ে একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে দিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। কিন্তু সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত না নিলেও এর মধ্যে পাইকারি পর্যায়ে দু-একটি ব্র্যান্ডের লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে।
লবণ মিলমালিকদের দাবি, দেশে অপরিশোধিত লবণের দাম প্রতি মণে ২০০ টাকার মতো বেড়ে যাওয়ায় পরিশোধিত প্যাকেটজাত লবণের মূল্য কেজিতে তিন টাকা বাড়াতে চায় কোম্পানিগুলো। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশে উৎপাদিত লবণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। গত ৬২ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ উৎপাদন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন। দেশে বছরে আয়োডিনযুক্ত লবণের চাহিদা প্রায় ৯ লাখ টন। প্রতি টন লবণ পরিমিত মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত করতে প্রায় ৫৫ গ্রাম পটাশিয়াম আইয়োডাইড দরকার হয়। সরকারিভাবে এটি আমদানি করা হয়।
লবণের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ হলেও দাম কমেনি। বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। গত বছরের এ সময় দাম ছিল ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার পরও এভাবে দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক বলা যায় না। যদিও মাঠপর্যায়ে লবণ উৎপাদনে ব্যয় কিছুটা বেড়েছে; কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধির এ ক্ষতি পুষিয়ে যাওয়ার কথা; বরং কিছুটা তাদের লাভ হওয়ার কথা। এর পরও পরিশোধিত লবণের দাম যদি কিছু বাড়ে সেটি অনুপাত অনুযায়ী বাড়তে পারে, তা কোনোভাবে আনুপাতিকের চেয়ে বেশি হওয়ার কথা নয়। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে নজর দেবে।