Naya Diganta

ছয় মাসে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২২,৩৩৯ কোটি টাকা


বেড়েই চলেছে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণ। ছয় মাসের ব্যবধানে টাকার অঙ্কে সরকারের ঋণস্থিতি বেড়েছে ২২ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট ঋণস্থিতি (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বা ২০২২ সালের জুন শেষে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা (জিডিপির ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ)। টাকার অঙ্কে ঋণস্থিতি বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে ঋণস্থিতি হ্রাস পেয়েছে ১ দশমিক ৮২ শতাংশ।


অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি এবং এ কারণে সার্বিক ঋণস্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপির ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা (এটি মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৬৩.৫৪% এবং জিডিপির ১৯.৪২%) এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা (এটি মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৩৬.৪৬% এবং জিডিপির ১১.১৪%)। গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পুঞ্জিভূত স্থিতি ছিল যথাক্রমে ৮ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা এবং ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।


সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গৃহীত ঋণের তুলনায় ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে সরকার বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গৃহীত সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা (২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ছিল ৪,১৩,৪৬৩ কোটি টাকা) এবং ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা (গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ছিল ৪,২৮,৩০৩ কোটি টাকা)। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে গৃহীত পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা (গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ছিল ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা)। দেখা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া সরকারের ঋণের স্থিতি কমে গেছে।


এর কারণ হিসেবে হিসেবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা বলেছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর কড়াকড়ি আরোপের কারণে এর বিক্রি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। গত তিন মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন বেশি। এখন সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ নেতিবাচক (নেগেটিভ) হয়ে গেছে।
সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দ্বিপক্ষীয় উৎসের তুলনায় বহুপক্ষীয় উৎস থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। পুঞ্জিভূত মোট বৈদেশিক ঋণের প্রায় ৬০ শতাংশই বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ পুঞ্জিভূত মোট বৈদেশিক ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশ।