Naya Diganta

সিতোরিউ কারাতে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বাংলাদেশের

প্রায় দুই শ’ কোচকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ওয়ার্ল্ড সিতোরিউ ফেডারেশনের সপ্তম ড্যান ফ্রান্স থেকে আগত বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন অভি : নয়া দিগন্ত

কারাতের মূলত চারটি ভাগ। সোতোকান, সিতোরিউ, গোজোরিউ, ওয়াদোরিউ। সবই আছে দু’টি ইভেন্ট। কুমি ও কাতা। প্রতিটির কুমি (ফাইট) স্টাইল একরকম হলেও কাতায় (ছায়া শো) কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ১৯৮২ সালে জাইকার পৃষ্ঠপোষকতায় জাপানি কোচ সিতোরিউ মাস্টার ইউশোনোতো নোনাকা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসেন। তবে বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সিতোরিউ কারাতের যে উত্থান তা নাজমুল হোসেন অভির হাত ধরে। অভি ১৯৮৮ সালে প্রথম ব্ল্যাকবেল্ট পান। এরপর ক্রমান্বয়ে সপ্তম ড্যান শেষ করেছেন। ১৯৯৪ সালে জাতীয় কারাতে রেফারি হন। বর্তমানে তিনি ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন ও ওয়ার্ল্ড সিতোরিউ ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশের একমাত্র টেকনিক্যাল সদস্য।
১৯৯৬ সালে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন ওয়ার্ল্ড কারাতে দো ফেডারেশনের সেমিনারে। সেখানেই ভালোভাবে পরিচয় হয় সিতোরিউ স্টাইলের সাথে। এতটাই পছন্দ হয়েছে সেখানে দুই বছর থেকে সিতোরিউ কারাতে রপ্ত করেন। এরপর বাংলাদেশে এসে তার প্রচলন করেন। ২০০০ সালে সিতোরিউ অ্যাসোসিয়েশন কারাতে ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হন। তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে কারাতে প্রশিক্ষণ শো করেন। ক্রীড়ালোক ম্যাগাজিনে নিয়মিত ফিচার লিখে কারাতেকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার এই উত্থানে অনেকেই বাধা দিয়েছেন। এমনকি ষড়যন্ত্র করে বাসায় পুলিশও পাঠিয়েছেন। কিন্তু পিছু হটেননি অভি। সব বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়েছেন। নিজ খরচে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে শিখিয়েছেন।
যার ফলও পেয়েছেন দশম সাউথ এশিয়ান গেমসে। সিতোরিউতে তিনটি স্বর্ণ পেয়েছেন হাসান খান সান, হোসেন খান মুন ও সৈয়দ নুরুজ্জামান। আর সোতোকানে চারটি স্বর্ণ পেয়েছেন মুন্নি খানম, জয় প্রু মারমা, মরিয়ম খাতুন বিপাশা ও উসাইনু মারমা। মোট সাতটি স্বর্ণ পেয়ে কারাতেতে বাংলাদেশ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। আর ২০১৯ সালে নেপাল সাফ গেমসে সিতোরিউর হুমায়রা অন্তরা, মারজান আক্তার প্রিয়া ও সোতোকানের আল আমিন স্বর্ণপদক পান। এ ছাড়া বাংলাদেশে যত প্রতিযোগিতা হয়, তার বেশির ভাগ পদকই আসে সিতোরিউ থেকে।
ব্ল্যাকবেল্ট পাওয়া আসমা খাতুনকে জীবন সঙ্গিনী করে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। সেখানে থেকেই সিতোরিউর উন্নতিতে কাজ করছেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে প্রায় দুই শ’ কারাতে কোচদের নিয়ে সেমিনার করেছেন। জানালেন, ‘আমার রক্তে মিশে গেছে কারাতে। শুরুর সময়ে অভিভাবক ছিলেন তৎকালীন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মরহুম আলী কবির ভাই। অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছিল, তিনি আমাকে আগলে রেখেছেন। সিতোরিউকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখি। চলতি বছরের শেষ দিকে সাফ অঞ্চল ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিয়ে বড় একটি টুর্নামেন্ট করতে চাই। সবার সহযোগিতা পেলে সিতোরিউতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’
বাংলাদেশে কারাতে ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান বাদল জানালেন, ‘সিতোরিউ কারাতে সত্যিই একটা ভালো অবস্থানে আছে। বিভিন্ন বাহিনীতে এর চর্চা রয়েছে। আর আনসার কারাতে টিমতো বিশেষ জায়গা দখল করে নিয়েছে সিতোরিউতে। ফাউন্ডার অভির কারণে এর প্রচার-প্রসার হচ্ছে। সে সাংগঠনিক বলেই সম্ভব হয়েছে।’
এশিয়ান কারাতে ফেডারেশনের বিচারক ও সাবেক জাতীয় কোচ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তার মতো নিবেদিতপ্রাণ কয়েকজন থাকলে এবং সবার সহযোগিতা থাকলে কারাতে আরো সুনাম বয়ে আনত বিদেশ থেকে।’